পতনেও পুঁজিবাজারে বেড়েছে মূলধন, টপটেনে দাপট দুর্বলদের
বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। তবে পুঁজিবাজারে মূলধন ২০৩ কোটি টাকা বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন বেশি। মোট লেনদেনের ২৯ শতাংশই ১০টি কোম্পানির দখলে। টপটেন বা শীর্ষ ১০ কোম্পানির লেনদেনে ছয়টিই ‘বি’ ক্যাটাগরি বা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। বাকি ৪০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেনে অবস্থান করেছে। এদের মধ্যে ছয়টির শেয়ার দর বাড়লেও কমেছে চারটির শেয়ার দর। গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই ১০টি কোম্পানি লেনদেন করেছে ৪৬২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরির সী পার্ল বিচের শেয়ার। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এছাড়া বিডি থাইয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা, অলিম্পিক এক্সেসরিজের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, খুলনা প্রিন্টিংয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকোর (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৩৭ কোটি ৩ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৩৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৩২ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং এমারেল্ড অয়েলের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৯৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৫০৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭২টির, দর কমেছে ৯৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০১টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ৩৪টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক দশমিক ৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৪৪ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস এক দশমিক ৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬২ দশমিক ৮১ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই৩০ সূচক দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৪ দশমিক ২৬ পয়েন্টে।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২০৩ কোটি ৩ লাখ টাকা বা দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৩ দশমিক ১৩ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ১২ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবারের ডিএসইর পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।