তথ্য সঠিকভাবে প্রদানে গড়বে আধুনিক পুঁজিবাজার : ডিএসই চেয়ারম্যান
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেছেন, আমাদের দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন হচ্ছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে এগুলো পুঁজিবাজারের মাধ্যমে হয়। এতে পুঁজিবাজার যেমন বড় হয়, তেমনই দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখে। তিনি বলেন, স্টেকহোল্ডারদের তথ্য সঠিকভাবে না দিলে আধুনিক পুঁজিবাজার করা সম্ভব হবে না।
আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ‘স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম অফ ডিএসই’ নামে প্লাটফর্মটি যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে হাসান বাবু এসব কথা বলেন।
হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের চারটি উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান হল স্মার্ট ইকোনমি। আর স্মার্ট ইকোনমির দুটি সেক্টর হচ্ছে ক্যাপিটাল মার্কেট ও মানি মার্কেট। আজকের এই বিষয়টি শুধু প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য পূরণ নয়, এটি স্মার্ট পুঁজিবাজার তৈরির অংশ হিসেবে কাজ করবে। অন্যান্য দেশে পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে অনেক ভূমিকা রাখলেও বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনক সেটা হয় না। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যেটা এখনও হয়ে ওঠেনি। কারণ আমাদের দেশের মেগাপ্রকল্পগুলোতে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন হচ্ছে। সেটা উন্নত দেশগুলোতে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে হয়। এতে পুঁজিবাজার যেমন বড় হয় তেমনই দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখে।
পুঁজিবাজারকে স্মার্ট করার জন্য এর কার্যক্রমকে পেপারলেস করতে হবে জানিয়ে হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, সেই পেপারলেসের যাত্রা আজকে এই প্লাটফর্ম চালুর মাধ্যমে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ডিএসই নিজস্ব স্মার্ট ডাকা সেন্টার তৈরি করছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে পুঁজিবাজার যে স্মার্টের দিকে যাচ্ছে সেটা ডিএসই গত বছর থেকেই শুরু করেছে। আজকে ছিল এর দ্বিতীয় উদ্যোগ। পুঁজিবাজারের অন্যতম উপাদান হল স্টেকহোল্ডারদের তথ্য সঠিকভাবে নেওয়া। সেটা যদি না নেয়া যায় তাহলে আধুনিক পুঁজিবাজার করা সম্ভব হবে না। সেই তথ্যই স্মার্টভাবে নেওয়ার কার্যক্রম আজকে থেকে শুরু করা হল। এতে তথ্য সঠিক সময় পাওয়া যাবে এবং সঠিক সময়ে নানা উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমরা যদি সকলকে সঙ্গে নিয়ে পুঁজিবাজারে উন্নয়নে কাজ করতে পারি তবে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট ইকোনমি বাস্তবায়ন করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম চালু হওয়ায় পুঁজিবাজার আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো এখন থেকে সহজে নির্ভুল তথ্য প্রকাশ করতে পারবে। আগে যে ইচ্ছা ও অনিচ্ছাভাবে ভুল তথ্য প্রদান ও প্রকাশ করার ঝুঁকি ছিল সেই ঝুঁকি আর থাকবে না। কেউ কোনো অনিয়ম করলে তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। আজকের এই কার্যক্রম শুরুর ফলে পুঁজিবাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপের যাত্রা শুরু হল। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের সহযোগিতায় ডিএসইর কর্মকর্তা স্পেশাল সাবমিশন সিস্টেম তৈরি করেছে। এতোদিন কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য ম্যানুয়ালি সাবমিশন করা হতো, যার ফলে অনিচ্ছাকৃত ভুল হবার সম্ভাবনা থাকত। এই সফটওয়্যারটি চালু হবার ফলে এই সমস্যাটিকে সমাধান হবে। আর এর ফলে কমপ্লায়েন্স পরিপালন করা সহজ হবে। একই সাথে ইনফরমেশন গ্যাপ ও অনিয়ম কমে যাবে।
অনুষ্ঠানে বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট রূপালী হক চৌধুরী বলেন, অনলাইনে তথ্য জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় এখন থেকে সময় অনেক বেঁচে যাবে। এতে করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য দ্রুততম সময়ে সবার কাছে পৌঁছানো যাবে। তবে সিস্টেমে সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে করে সমস্যা হওয়ার কারণে সিস্টেমের কাজ বন্ধ না হয়ে যায়। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা। সবার সঙ্গে কাজ করে বাজারের আরও উন্নতি করা। কোম্পানিগুলোর কিছু সমস্যা আছে। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বাজারের এবং বিনিয়োগকারীদের যাতে কোনো সমস্যা বা ক্ষতি না হয়। আজকের এই সিস্টেমের ফলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের অংশ ছাড়াও তথ্য দেওয়া আরও সহজ হবে। এতে সময়ের যে ব্যয় হত সেটাও কমে যাবে। যা সময়োপযোগী কাজ হয়েছে। অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে যারা এই সফটওয়্যারটি অতি সহজে ব্যবহার করতে পারবে। একই সাথে কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা অটোমেটেড নয় তাদের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে সহযোগিতা করতে হবে। তারা সময়ের সাথে সাথে এই সফটওয়্যারটিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য কোনোভাবে যাতে ভুল প্রকাশ না হয় এবং বাদ না যায় সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজার থেকে অনৈতিক মুনাফা করতে না পারে এবং ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আজকের এই উদ্যোগের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অনেক ধন্যবাদ। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শুরু হয়েছে। বর্তমানে ডিএসইর চেয়ারম্যান একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। তাই ভবিষ্যতে যদি ডিএসইর আইটি প্লাটফর্মে ঘাটতি থাকে তবে সেটা দুঃখজনক হব। এছাড়া চায়নারা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার পর এই প্রথম কোনো কাজে তাদের সহযোগিতা দেখা গেছে। তবে কোম্পানিগুলোর তথ্য যাতে ঠিকভাবে যাচাই করে প্রকাশ করা হয়। তাহলে সবার উদ্দেশ্যে পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান মো. রবিউল ইসলাম। সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ।