কর ছাড় বৃত্ত থেকে বের হতে হবে : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘পুঁজিবাজারে উন্নয়নে যারা সরকারের কাছে নানা ধরনের করের সুযোগ-সুবিধা বা কর ছাড় প্রত্যাশা করছেন, তাদেরকে এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ দেশ বড় হচ্ছে, ব্যয় বাড়ছে। রাজস্ব আহরণের বিভিন্ন খাত তৈরি হচ্ছে। এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নতুন নতুন প্রোডাক্ট এনে বাজারের আকার বাড়াতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রোকাররা ভালো থাকলে ডিএসই ভালো থাকবে।’
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নিজস্ব ভবনে আয়োজিত ‘ডিবিএ স্টক ব্রোকার্স পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ এবং এশিয়া সিকিউরিটিজ ফোরামে (এএসএফ)’ সদস্য শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মিজানুর রহমান, ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, আব্দুল হালিম, ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রোকারেরা ডিএসইকে বাঁচিয়ে রাখবে। সেখানে যদি ব্রোকারদের বাঁচিয়ে রাখার কথা শুনতে হয়, সেটা অনেক কষ্ট লাগে। কারণ ব্রোকাররা ভালো থাকলে ডিএসই ভালো থাকবে। ব্রোকাররা বাঁচলে ডিএসই বাঁচবে। নতুন নির্বাচন হয়েছে, নতুন সরকার এসেছে। এখন সময় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার, বাজারকে আরও গতিশীল করার।’
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘পুঁজিবাজারের প্রাণশক্তি হলো লেনদেন। শেয়ার দর বাড়ল বা কমলো, এটা চিন্তা করা ঠিক না। দর বাড়বে-কমবে এটাই স্বভাবিক নিয়ম। তবে দেখতে হবে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। বাজারের নতুন নতুন প্রোডাক্ট আনতে হবে। পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বড় বড় অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আক্ষেপ নিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের (ডিএসই) সবকিছুই নিজেদের আছে। এরপরও এখনও ডিমিউচুয়ালাইজড হতে পারিনি। অনেক সময় পার হয়েছে। ডিএসইকে স্বাধীনভাবে চলতে হবে। আমাদের ক্যাপিটাল ফর্মেশন গত ৫২ বছরে হয়নি। এখনও বড় অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু, এটা হবার কথা না। বড় প্রকল্পের অথায়নের জন্য পুঁজিবাজারের ওপরে নির্ভর করা উচিত। আমাদের সেই দিকে যেতে হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাই নিবিড়ভাবে কাজ করছে জানিয়ে বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি ব্রোকার-কেন্দ্রিক বেশি। এজন্য রিয়েল টাইম সেবা দিতে ব্রোকারদের সঙ্গে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বড় ব্রোকারগুলো তাদের অ্যাপস আপডেট করছে। এতে ব্যয় অনেক কমে আসবে। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে ব্রোকার সেবা আন্তর্জাতিক মানে চলে যাবে।’
বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, ‘ডিবিএ আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এটা আনন্দের। পাশাপাশি সদস্যদের পুরস্কৃত করছে ডিবিএ। এসব কারণে কমপ্লায়েন্সের বিষয়টি উন্নতি লাভ করবে। এখন ২০ প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এতে অন্যরা সামনে আরও ভালো করবেন। বাজারের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবেন।’
কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ২০টি ব্রোকারেজ ডিএসইর ৫০ শতাংশ লেনদেন করে। ভারতে মাত্র পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউজ ৬০ শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন করে। কারণ হচ্ছে তারা প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। আমাদের এখানেও টেকনোলজিতে বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর উন্নয়ন ঘটাতে পারলে সময় ও ব্যয় উভয়ই বাঁচবে।’
ডিএসইকে শক্তিশালী করতে হবে জানিয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘যতদিন দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার দিয়ে অবদান রাখতে পারব না, ততদিন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। লোন বলতে ব্যাংক খাত বুঝি। ব্যাংক খাত অর্থনীতিকে নিঃস্ব করেছে। তাই আমাদেরকে পুঁজিবাজারের দিকে ধাবিত হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট পুঁজিবাজার ও স্মার্ট মানি মার্কেট গড়ে তুলতে হবে।’
ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সেরা ২০টি ব্রোকারেজ হাউজকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো লেনদেনের ৫০ শতাংশ সম্পন্ন করছে। এ ছাড়া আমরা এশিয়া সিকিউরিটিজ ফোরামে যুক্ত হয়েছি। এই ফোরামে বিভিন্ন দেশের ৩০টি সংগঠন তালিকাভুক্ত আছে।’