৭৫ শতাংশ কোম্পানির দরপতন, কমেছে মূলধন
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতনে পার করল গত সপ্তাহ। সপ্তাহটিতে লেনদেনের পরিমাণ ১২ শতাংশ কমেছে। বাজারে মূলধন কমেছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। কমেছে ৭৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। শীর্ষ ১০ কোম্পানি একাই লেনদেন করেছে ২৬ শতাংশ।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) ডিএসইর প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। তবে আগের সপ্তাহ থেকে আলোচিত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে এক হাজার ৩৫ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। বাজারে মূলধনের পরিমাণ কমেছে ৬ হাজার ৫৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা দশমিক ৭৮ শতাংশ। সপ্তাহটিতে ৭৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। মোট লেনদেনের ২৫ দশমিক ৭৪ শতাংশই ১০টি কোম্পানির দখলে। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৪৬৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারে শেয়ারবাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকায়।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে সাত হাজার ৪৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল আট হাজার ৪৭৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৮৮ কোটি সাত লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৩টির, দর কমেছে ৩০৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১১টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৩৬ দশমিক ২৫ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস পাঁচ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৮২ দশমিক ২২ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১৮ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৫৭ দশমিক শূন্য ছয় পয়েন্টে।
গেল সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৫০ শতাংশ লেনদেন শীর্ষ ১০টি কোম্পানির দখলে রয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং ১০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। এদের মধ্যে আটটির শেয়ার দর বাড়লেও কমেছে দুইটির শেয়ার দর। গেল সপ্তাহে এই ১০টি কোম্পানি লেনদেন করেছে এক হাজার ৯১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘এন’ ক্যাটাগরির বেস্ট হোল্ডিংসের শেয়ার। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ২৯৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। শেয়ার দর বেড়েছে ২৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
এ ছাড়া ওরিয়ন ইনফিউশনের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মার (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ফরচুন সুজের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, আইএফআইসির (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিংয়ের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৪৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৪২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৪২ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং আইটিসির (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৩৩ কোটি এক লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১২ দশমিক ৬১ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১২ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবারের ডিএসইর পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।