৮৩ শতাংশ কোম্পানির দরপতন
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ সোমবার (১৮ মার্চ) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত ৩৩ মাস ২৩ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন পয়েন্টে অবস্থান করেছে। আজ লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। তবে বাজারে মূলধন পরিমাণ ২৭ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা বেড়েছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেয়ার কেনার চাপে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের উত্থান হয়েছে। লেনদেনে শুরুর প্রথম এক ঘণ্টা দুই মিনিটে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উত্থান হয় ১৪ পয়েন্ট। ডিএসইএক্স বেড়ে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ৯৮২ পয়েন্টে। আলোচিত সময়ে লেনদেন ১০৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরে সূচক নিম্নমুখি হয়। লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স পতন ৬৯ পয়েন্ট। লেনদেন ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
আজ ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে নেমে আসে, এ ধরনের কম পয়েন্টের সূচক বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। এতে অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে শেয়ার বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ নানা মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করতে চাচ্ছে একটি চক্র। তাদের (চক্র) ইচ্ছে, পতন ভয়ে যেন কম দরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে। তাই এমন অবস্থায় বুঝে ও বিশ্লেষণে শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন ৫১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এদিন পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ২৭ হাজার ৩৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার। একদিনে ব্যবধানে বাজারে মূলধন বেড়েছে ২৭ হাজার ৭২৯ কোটি তিন লাখ টাকা। আজ সূচক ডিএসইএক্স ৬৯ দশমিক ৮০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮৯৮ দশমিক ২৩ পয়েন্টে। এর আগে ২০২১ সালের ২৫ মে ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে নেমেছিল। এদিন ডিএসইএস ১৩ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮৬ দশমিক ২৪ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস৩০ সূচক আট দশমিক ৯৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪২ দশমিক ৬২ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪টির ও কমেছে ৩৩০টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৩২টির।
আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে গোল্ডেন সনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোল্ডেন হারভেষ্ট এগ্রোর ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা, লাভেলো আইসক্রিমের ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার ১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, লার্ফাজহোলসিমের ১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বেস্ট হোল্ডিংয়ের ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, এসএস স্টিলের ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং আফতাব অটোর ৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। কমেছে লেনদেন সহ বাজারে মূলধনের পরিমাণ। সিএসইতে সোমবার ১২ কোটি ৯৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ১৩ কোটি ৯৩২ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ২২ হাজার ২১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ২৫ হাজার ৭৫০ কোটি তিন লাখ টাকা। সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৬১ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯২৯ দশমিক ১২ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক ৯ দশমিক ৭২ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৯৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৯৬ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক আট দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমেছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৪৬টির এবং কমেছে ১৫৭টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ২৪টির। লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির দুই কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।