একদিনেই ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি কমল মূলধন
পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক মন্দায় বিনিয়োগকারীদের লোকসান বৃত্ত দিনদিন বাড়ছে। বড় ধরনের লোকসান ভয়ে তড়িঘড়ি করে অনেকেই কম ধরে শেয়ার বিক্রি করছে। ফলে পুঁজিবাজারের পতন আরও বেড়ে যাচ্ছে। তেমনি আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিক্রির চাপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত ৩৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পয়েন্টে অবস্থান করেছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮০ দশমিক ৫৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। বাজারে মূলধনসহ কমেছে লেনদেন পরিমাণ।
জানা গেছে, শেয়ার বিক্রির চাপে আজ লেনদেন শুরুতেই সূচক পতন হয়। বেলা বাড়ায় সেই পতন আরও বড় হয়। লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স পতন ৮৪ পয়েন্ট। লেনদেন পরিমান ৪৬৫ কোটি টাকা। বাজারে মূলধন পরিমাণ কমেছে ৩৯ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে আজ, এ ধরনের কম পয়েন্টের সূচক বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। এতে অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে শেয়ার বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বড় দরপতনের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। সাধারন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই তারা কারসাজির মাধ্যমে বাজারে পতন ঘটাচ্ছে। চক্রটি পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতে তৎপর। আরও বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ নানা মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করছে চক্রটি। তাদের (চক্র) ইচ্ছে, পতন ভয়ে দেখিয়ে কম দরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার হাতিয়ে নেওয়া। তাই এমন অবস্থায় বুঝে ও বিশ্লেষণে শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৪৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস সোমবার লেনদেন ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এদিন পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৮৭ হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস সোমবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ২৭ হাজার ৩৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার। একদিনে ব্যবধানে বাজারে মূলধন কমেছে ৩৯ হাজার ৩৯০ কোটি তিন লাখ টাকা। আজ সূচক ডিএসইএক্স ৮৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮১৪ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে। এর আগে ২০২১ সালের ২৩ মে ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৭৮৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে নেমেছিল। এদিন ডিএসইএস ১৭ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬৮ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস৩০ সূচক ২২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২০ দশমিক ১১ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির ও কমেছে ৩১৯টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৩৬টির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৮ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। বাজারে মূলধনের পরিমাণ কমেছে। তবে বেড়েছে লেনদেন পরিমান।সিএসইতে মঙ্গলবার ১৬ কোটি ৮৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কর্মদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ২২ হাজার ২১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস সোমবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ১৩ হাজার ৮১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৭৫ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক ১৮ দশমিক ৩০ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৬৪ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১৬৫ দশমিক শুন্য এক পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১৬ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমেছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৩৬টির এবং কমেছে ১৭০টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ১২টির।