আয়ারল্যান্ডের দাপটে বাংলাদেশের হতাশার দিন
সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম মিলে টেস্টের দ্বিতীয় দিন উপহার দেন ঝলমলে বিকেল। স্বপ্ন দেখান ইনিংস ব্যবধানে জয়ের। সেই পরিকল্পনা যে আয়ারল্যান্ড এভাবে ভেস্তে দেবে সেটা কে জানত? টেস্টের তৃতীয় দিন জয় তো দূরে উল্টো পুরো তিন সেশনেই শেরেবাংলায় দাপট দেখাল আইরিশরা। তাতে বড় জয়ের আশা ভুলে আপাতত চতুর্থ দিনের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
আগামীকাল শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশের চিন্তার রেখা আরও বড় হতে পারে। কারণ, আজই ইনিংস ব্যবধানে হার এড়িয়ে ১৩১ রানের লিড নিয়ে নিয়েছে আয়ারল্যান্ড। কাল সেই লিডটা কততে গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার! সবমিলিয়ে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনে চরম হতাশায় ডুবল বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে আইরিশদের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৮৬ রান। দিন শেষে উইকেটে অপরাজিত আছেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইন (৭১) ও গ্রাহাম হিউম (৯)। এরই মধ্যে ১৩১ রানের লিড পাওয়া আয়ারল্যান্ড যে কাল বাংলাদেশকে কত রানের টার্গেট দেবে, সেটিই দেখার অপেক্ষা!
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ থেকে ১২৮ রান পিছিয়ে আজ তৃতীয় দিন শুরু করে আয়ারল্যান্ড। তখন তাদের স্কোরবোর্ডে ছিল ২৭ রান, হাতে ছিল ৬ উইকেট। এই ছয় উইকেট নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোলে অতিথিরা।
দ্বিতীয় দিনের মতো আজও প্রথম ওভার শুরু করেন সাকিব আল হাসান। সাকিব ও তাইজুল প্রথম ছয় ওভার করার পর আক্রমণে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন স্পিনার মিলেও উইকেট নিতে না পারায় সাকিব বোলিংয়ে আনেন পেসার শরিফুল ইসলামকে। প্রথম ১৪ ওভারেই চারজন আলাদা বোলারকে আক্রমণে আনে বাংলাদেশ। তবু উইকেট ধরা দিচ্ছিল না।
প্রথম সেশনের শুরুটা বেশ দেখেশুনে খেলেন দুই ব্যাটার ট্যাক্টর ও পিটার মুর। অবশেষে দিনের ৫৪তম মিনিটে এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান শরিফুল ইসলাম। আইরিশদের ইনিংসের ৩২.১ ওভারে মুরকে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান পেসার শরিফুল। দলীয় ৫১ রানে ৫ উইকেট হারায় আইরিশরা। এরপর এই সেশনে আর উইকেট যায়নি অতিথিদের। বরং, আরেকটি জুটি পেয়ে যায় সফরকারীরা।
হ্যারি ট্যাক্টরের সঙ্গে এবার জুটি গড়েন ট্যাকার। দুজন মিলে ১৪৫ বল থিতু হয়ে গড়েন ৭২ রানের জুটি। লাঞ্চ বিরতির পর এই জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। ২১০ মিনিট উইকেটে থাকা ট্যাক্টরকে এলবির ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। বাংলাদেশি স্পিনারের ফুল লেংথ ডেলিভারি ট্যাক্টরের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে প্যাডে আঘাত হানে। জোরাল আবেদন উঠলে আউট দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি আইরিশ ব্যাটারের। প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করা ট্যাক্টর ১৫৯ বলে ৫৯ রান করে থামেন।
ট্যাক্টরের পর বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন ট্যাকার। ৯৪ বলে তিনি তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। তৃতীয় সেশনে এসে সেঞ্চুরিও পেয়ে যান তিনি। ১৫৯ বলে আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পান টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা। শেষ পর্যন্ত ২২৬ মিনিট ধরে উইকেটে থাকা এই ট্যাকারকে থামান ইবাদত।
তাতেও বিপদে পড়েনি আয়ারল্যান্ড। ট্যাকারের পর দিনের বাকি সময় আধিপত্য দেখান ম্যাকব্রেইন। ৯৩ বলে ব্যাক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ম্যাকব্রেইন বাকি সময় আইরিশদের ব্যাটিং ধরে রাখে। তাতে স্বস্তি নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে আয়ারল্যান্ড আর হতাশায় পড়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে টেস্টের প্রথম দিন টস জিতে আগে ব্যাট করে ৬২.২ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২১৪ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। বিপরীতে শেষ বিকেলে খেলতে নেম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
এরপর দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে এনে প্রথম ইনিংসে ৩৬৯ রানে থামে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের লিড দাঁড়ায় ১৫৫ রানে। এই রানে পিছিয়ে থেকে কাল শেষ বেলাতেই ব্যাটিং নেমে দ্রুত ৪ উইকেট হারায় আইরিশ। যার মধ্যে সমান দুটি করে সাকিব ও তাইজুল। মূলত দুই স্পিনার মিলেই বাংলাদেশের সমীকরণ সহজ করে দেন। কিন্তু সেই সমীকরণ তৃতীয় দিন মেলাতে পারল না সাকিব আল হাসানের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৬৯
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৭/৪) ১০৭ ওভারে ২৮৬/৮ (টেক্টর ৫৬, মুর ১৬, টাকার ১০৮, ম্যাকব্রাইন ৭১, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ৯; সাকিব ১৩-৪-২৬-২, তাইজুল ৩৮-১৫-৮৬-৪, মিরাজ ২৮-৭-৫৭-০, ইবাদত ১২-১-৩৬-১, শরিফুল ৮-১-৩৫-১, খালেদ ৭-২-৩৮-০, মমিনুল ১-০-২-০)।