ইতিহাস গড়ে সমালোচনার জবাব দিলেন মুশফিক
ইনিংসের তখনও বাকি এক বল। বাংলাদেশের রান ৩৪৮। ওয়ানডেতে প্রথমবার সাড়ে তিনশ করা থেকে ২ রান দূরে। অথচ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি কিংবা টিভির সামনে থাকা দর্শকদের তাতে আগ্রহ নেই। কারণ, মুশফিকুর রহিম তখন ৯৯ রানে ব্যাট করছেন। শতক হবে কি না তা নিয়ে সবার সব আগ্রহ। গ্রাহাম হিউমের করা শেষ বল ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে ১ রান নেন মুশফিক। সিলেট থেকে গোটা বাংলাদেশ উল্লাসে মাতে। মাত্র ৬০ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন বীরের বেশে।
ক্যারিয়ারের নবম শতক তুলে নিলেন মুশফিক। ঝড়ো সেঞ্চুরিতে জবাব দিলেন সমালোচনার। এটি কেবলই শতকে সীমাবদ্ধ নয়। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম শতক এটি। এর আগে যা ছিল সাকিব আল হাসানের দখলে। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। এই ম্যাচের আগে মুশফিকের সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি ছিল ৬৯ বলে। ২০০৯ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শতকটি হাঁকান তিনি।
তবে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে করা এই শতকের মাহাত্ম্য মুশফিকের কাছে কতটা, তা বোঝা গিয়েছে ইনিংস শেষে তার চেহারা দেখে। যেন বহুদিন অপেক্ষা করছিলেন দিনটির জন্য। অবশেষে সেটি আসাতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে ৭০ ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ৪৪ রান করে দিয়েছিলেন ফর্মে ফেরার বার্তা।
আজ ব্যাট যেন বাধ্য ছেলের মতো কথা শুনেছে মুশফিকের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের মিস্টার ডিপেন্ডেবল মাঠে নামার পর রানের গতিও বাড়তে শুরু করে হুড়মুড়িয়ে। যেভাবে যেদিকে যখন ব্যাট চালিয়েছেন, সফল হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটার এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ছুটিয়েছেন শটের ফুলঝুরি। ১৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে ১৪ চার ও ২ ছয়ে ৬০ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেন তিনি। এর আগে অর্ধশতকে পৌঁছান মাত্র ৩৩ বলে। মার্ক অ্যাডাইরকে ছয় মেরে পঞ্চাশ পেরোনো মুশফিক পরের পঞ্চাশ করতে খেলেন মাত্র ২৭ বল!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের পরিশ্রমের ছবি নিয়মিতই প্রকাশ করেন মুশফিকুর রহিম। তা নিয়ে প্রায়ই সমালোচনার শিকার হতে হয় তাকে। তবে আজ আর সমালোচনা নয়, মন থেকেই তার জন্য ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে গোটা দেশ। নির্ভরতার প্রতীক মুশফিক নিজে নির্ভার হয়েছেন অনবদ্য শতকে, নির্ভার করেছেন দলকেও।