এক সিরিজে যত রেকর্ড বাংলাদেশের!
আকাশের নীল, বাসন্তী হাওয়া, মাঠে সবুজের সমারোহ আর সিলেটের গ্যালারিতে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ স্লোগানের উচ্ছ্বাস; সব মিলিয়ে যেন একাকার। ভক্তদের সেই উচ্ছ্বাসকে অর্জন দিয়ে পরিপূর্ণ করলেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানরা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া তিন ম্যাচের ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজটা বাংলাদেশের ইতিহাসে জেগে থাকবে এক রেকর্ডমাখা অধ্যায় হয়ে। এটি এমন এক সিরিজ, যার প্রতি ম্যাচেই হয়েছে একাধিক রেকর্ড, যা এর আগে বোধ হয় দেখেনি কেউ!
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে গত শনিবার (১৮ মার্চ) আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান করে। যেটি ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। সেই ম্যাচে ৯৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন সাকিব। প্রবেশ করেন তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সাত হাজার আন্তর্জাতিক ওয়ানডে রানের ক্লাবে। ৩৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আয়ারল্যান্ড ১৫৫ রানে অলআউট হয়ে গেলে বাংলাদেশ জয় পায় ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে, যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জয়।
এরপর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে গত সোমবার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ যেন মাঠে নামে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার পণ করে। সেদিনও আগে ব্যাট করে সিলেটে তুলোধুনা করে আইরিশ বোলারদের। ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থামে ৩৪৯ রানে। ছাড়িয়ে যায় মাত্রই আগের ম্যাচে করা দলীয় সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহকে। শুধু একটি রেকর্ডে থামেননি বাংলাদেশের তারকারা। লিটন দাস আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে দুই হাজার রান পূর্ণ করেন ৬৫ ম্যাচে। শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গে যা যৌথভাবে সবচেয়ে কম ম্যাচে বাংলাদেশি হিসেবে দুই হাজার রান করার রেকর্ড।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অধিনায়ক তামিম ইকবাল অর্জন করেন সব ফরম্যাট মিলিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক রান করার গৌরব। তামিমের প্রিয় বন্ধু মুশফিকুর রহিম যেন সেদিন মাঠে নামেন সবাইকে ম্লান করে দিতে। মাত্র ৬০ বলে খেলেন অপরাজিত ১০০ রানের ঝড়ো ইনিংস। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটিই এখন সবচেয়ে দ্রুততম ওয়ানডে শতকের রেকর্ড।
পাশাপাশি তামিম-সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে প্রবেশ করেন সাত হাজার ওয়ানডে রানের ক্লাবে। বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত না হলে হয়তো আরও কিছু রেকর্ড হয়ে যেত। সেসব না হওয়া রেকর্ডের আফসোস বাংলাদেশ মেটায় আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে।
পেসার হাসান মাহমুদের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে আগে ব্যাট করে মাত্র ১০১ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন হাসান। হাসানের পাশাপাশি তাসকিন আহমেদ নেন ৩ উইকেট ও এবাদত হোসেন নেন দুটি। অর্থাৎ, প্রতিপক্ষকে অলআউট করার পথে ১০ উইকেটের সবকটি নিয়েছেন পেসাররা। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে কখনোই এমনটি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
১০২ রানের লক্ষ্যে জবাব দিতে নেমে তামিম-লিটনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৩.১ ওভারেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে বাংলাদেশ। পায় ১০ উইকেটের জয়। এটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষকে ১০ উইকেটে হারানোর রেকর্ড।
ক্রিকেটে রেকর্ড হওয়া নতুন কিছু নয়, কিন্তু এক সিরিজের সব ম্যাচেই একাধিক রেকর্ড হওয়াটা কেবল নতুন নয়, বিরলও বটে। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনেক বছর ধরেই সমীহ জাগানিয়া দল। এবার সিলেটের উইকেটও ছিল আদর্শ স্পোর্টিং উইকেট। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যেন এই সিরিজে আয়ারল্যান্ড নয়, লড়াইয়ে নেমেছে নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য। বলা বাহুল্য, ২-০ তে জেতা সিরিজটা সিরিজের চেয়েও বেশিকিছু দিয়েছে শতভাগ আনন্দসমেত।