‘এটা স্রেফ ইট-সিমেন্টের নয়, মানুষের কাছে অনেক আবেগ-অনুভূতির’
আগামী জুনের শেষ দিকে উদ্বোধন হচ্ছে পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে সেতুটি যান চলাচলের জন্য তৈরি হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশ দলের সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাও তাতে খুবই আনন্দিত। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি নড়াইল-২ আসনের এই সংসদ সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে মাশরাফী নিজের খুশির কথা প্রকাশ করেছেন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো :
‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু কতটা জরুরি, ওই পথে চলাচলের অভিজ্ঞতা ছাড়া তা আসলে বোঝা খুবই কঠিন। দুটি ঈদের কথা উল্লেখ না-ই করলাম, তখন তো গোটা দেশের মানুষই নিউজে দেখতে পায় কতটা কষ্ট করে মানুষ নদী পার হয়। কিন্তু শীতকালে যে কী অবস্থা হয়, সেটা কেবল তারাই বোঝে, যাদের এই অভিজ্ঞতা হয়। তার ওপর নানা সময়ে নিম্নচাপ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তো কথাই নেই, সারা রাত ফেরি বন্ধ।
বছরজুড়ে নানা সময়ে গাড়ির সিরিয়াল যখন শুরু হয়, বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ঘাটে বসে থাকতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। শতশত মালবাহী ট্রাক থাকে অপেক্ষায়, কাঁচামাল তো ঘাটেই পঁচে যায়, এসব মোটামুটি নিয়মিত চিত্র। এরপর যদি নদীর স্রোতে ঘাট ভেঙে যায়, যন্ত্রণা তখন আরও বেড়ে যায়।
সবচেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপার হয়, যখন কোনো মুমূর্ষু রোগী নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। প্রতিটি মিনিট তখন মনে হয় অনন্তকাল। ওই পরিবার তখন কতটা অসহায় থাকে, কেউ ওই অবস্থায় না পড়লে বোঝা দায়। ঘাটেই রোগী মারা গেছে, ঢাকায় এনে চিকিৎসা করানো যায়নি, এরকম নজির আছে অনেক। প্লেনে বা হেলিকপ্টারে রোগী আনার সামর্থ্য কজনেরই বা আছে!
এছাড়াও আরও কত যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, এই পথের নিয়মিত যাত্রীরাই কেবল বোঝে। সেই যন্ত্রণাময় দিনগুলো শেষ হতে চলেছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। কোটি কোটি মানুষের কাছে এটা স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু। অনেকে কখনও কল্পনাও করতে পারেননি, জীবদ্দশায় পদ্মার ওপর সেতু দেখতে পাবেন। এটা স্রেফ ইট-সিমেন্টের সেতু নয়, এই অঞ্চলের মানুষের কাছে এটা অনেক আবেগ-অনুভূতির প্রতিশব্দ।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব সমস্যার সমাধান তো এখন হবেই, এই অঞ্চলে এখন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, বেকারত্ব দূরীকরণে তা ভূমিকা রাখবে, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে।
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না। সমস্ত রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে সবার থেকেই একটি ধন্যবাদ অন্তত আপনার প্রাপ্য।’