কোকেন নিয়ে ফিক্সিংয়ের ফাঁদে পা, নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন টেইলর
স্পট ফিক্সিংয়ের ফাঁদে পড়ার অবিশ্বাস্য গল্প শোনালেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। তবে এই ঘটনা আইসিসিকে খুব দেরিতে জানানোয় বড় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন তিনি। স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর তা দীর্ঘদিন গোপন করায় ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন টেইলর।
ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালে। কিন্তু শুরুর দিকে পুরো ঘটনা আইসিসিকে জানাননি টেইলর। চার মাস পরে জানালেও আইসিসি এখনো এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে টেইলর নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই গল্প সবাইকে জানালেন।
টুইটারে চার পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে পুরো ঘটনার বিবৃতি দিয়েছেন টেইলর। ঘটনার শুরু থেকে জানিয়ে টেইলর বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে একটা বোঝা আমি বয়ে চলছি। যেটা আমাকে এক অন্ধকার জগতের দিকে নিয়ে গেছে, আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ঘটনাটি সম্প্রতি কাছের বন্ধু ও পরিবারের কাছে বলতে পেরেছি। আমি যে সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে শুরুতে বলতে আমি ভয় পেয়েছিলাম ও লজ্জাবোধ করছিলাম।’
এরপর পুরো ঘটনার বিবরণ দেন টেইলর, ‘২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারতীয় এক ব্যবসায়ী স্পনসরশিপ নিয়ে আর জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে ডেকে পাঠান। এ ভ্রমণের বিনিময়ে আমাকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।’
‘এই প্রস্তাব আমি ফিরিয়ে দিতে পারিনি। খুব চিন্তিত ছিলাম কারণ সে সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট থেকে প্রায় ৬ মাসের বেতন পাইনি আমরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারবে কি না—সেটা নিয়েও শঙ্কা ছিল। তাই আমি ভারতে গেলাম। কথামতো আলোচনা হলো। হোটেলে শেষ রাতে ওই ব্যবসায়ী ও তার সহকর্মীরা আমাকে এক নৈশভোজে নিয়ে গেলেন।’
এরপর টেইলরকে মাদকের ফাঁদে ফেলে দেন ওই ব্যবসায়ীরা। টেইলর বলেন, ‘সেখানে তারা ড্রিংস নিয়ে আসে। আমরা মদপান করছিলাম। এরপর আমাকে কোকেন নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন তারাও সেটা নিচ্ছিল। আমি বোকার মতো রাজি হয়ে গেলাম। অসংখ্যবার এরপর এটা নিয়ে ভেবেছি, সে রাতের ঘটনাপ্রবাহ মনে করে এখনো অসুস্থ বোধ করি—তারা আমাকে কীভাবে বোকা বানিয়েছিল!’
কোকেন নেওয়ার পর টেইলরকে ফেলা হয় ফিক্সিংয়ের ফাঁদে, ‘পরদিন সেই লোকগুলো আমার হোটেল রুমে ছুটে আসে। তারা আমার কোকেন নেওয়া অবস্থার একটা ভিডিও দেখায়। এরপর বলা হয়, আমি যদি তাদের কথামতো আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্পট ফিক্সিং না করি, তাহলে তারা এ ভিডিও ছেড়ে দেবে। আমি ফেঁসে যাই। আর আমার রুমে ছয়জনকে দেখে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও ভয় জাগে। আমি ফাঁদে পা দিয়ে দিলাম। তখন মনে হচ্ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে ফেলেছি, যেটি আমার জীবন পুরো বদলে দেবে। সে সময় ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে বলা হয়, এটা স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য অগ্রিম অর্থ, বাকিটা ‘কাজ শেষে দেওয়া হবে। আমি ডলারগুলো নিই, যাতে ভারত ছাড়তে পারি। আমার মনে হয়েছিল, এ ছাড়া উপায় ছিল না, কারণ, না বলতে পারতাম না। আমার শুধু মনে হয়েছিল, সে জায়গা থেকে বেরোতে হবে। পুরোই এলোমেলো হয়ে পড়ি তখন। এরপর আমার শিঙ্গলস (একধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ) ধরা পড়ে। মানসিক সুস্থতার জন্য এমিট্রিপটাইলিনের মতো কড়া ওষুধও দেওয়া হয়।’
দেশে ফেরার পর ভারতীয় ব্যবসায়ী ফিক্সিংয়ের জন্য চাপ দেয় টেইলরকে। তবে জিম্বাবুয়ে তারকা দাবি করছেন, ওই প্রস্তাবে তিনি সাড়া দেননি। কিন্তু আইসিসিকে এই প্রস্তাবের কথা জানাতে দেরি করে ফেলেন তিনি, ’আমি জানাতে চাই, কখনো কোনো ধরনের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি হয়তো অনেক কিছু করেছি কিন্তু ধোকা দেইনি। ক্রিকেটের মতো সুন্দর খেলাটার জন্য আমার ভালোবাসা অনেক বেশি। যে কোনো হুমকিকে পথে ছুঁড়ে ফেলতে পারি এটার জন্য।’
টেইলর বলেন, ‘আমি জানি এটা একটু বেশি সময়। তবে আমার মনে হয়েছিল এভাবে আমি সবাইকে নিরাপদ রাখতে পারব, বিশেষ করে আমার পরিবারকে। আমি নিজে থেকে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আশা করেছিলাম, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার নিজের পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করতে পারলে তারা এই দেরি করার কারণটা বুঝতে পারবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা বোঝেনি। তবে নিজের মূর্খতার ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে পারব না আমি। দুর্নীতিবিরোধী অনেক সেমিনারে ছিলাম আমি, আমরা জানি, এমন সময়েই রিপোর্ট করতে হয়। আমাকে বলা হয়েছে, আইসিসি কয়েক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। আমি এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছি। আশা করছি, আমার গল্পটা আইসিসিকে পরে অন্য ক্রিকেটারদের দ্রুত জানানোতে উৎসাহী করবে।’
এই ঘটনার পর একটা ট্রমার মধ্যে আছেন টেইলর। তাই রিহ্যাভ সেন্টারেও যেতে হচ্ছে এই তারকাকে।
টেইলর বলেন, ‘আপনাদের এটাও জানাতে চাই। আমি একটা রিহ্যাভ সেন্টারে যাচ্ছি নিজেকে শুদ্ধ করতে ও জীবনের সঠিক পথে ফিরে আসতে। আমাকে এখন নিজের গল্পটা শোনাতে হবে। কারণ আমি জানি তারা আমার গল্প শুনতে চাইবে। তবে কয়েক সপ্তাহের জন্য আমি বাইরে চলে যাচ্ছি ও ভালো হতে চাচ্ছি। আমি বুঝতে পারিনি, এসব সামনে এগিয়ে আসা ও কথা বলা আমাকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবে যেখানে আমি কয়েক বছর ধরে আছি। শেষে এসে বলতে চাই, যাদেরকে দুঃখ দিয়েছি তাদের কাছে ক্ষমা চাই।‘