‘ঘুম থেকে উঠেই দেখি খেলা শেষ’
ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের লড়াই যখন শুরু হয় বাংলাদেশ সময় ঘড়িতে তখন ভোর ৪টা। অনেকেই আশা করেছিলেন হয়তো ঘুম থেকে উঠে আগ্রহ নিয়ে দেশের খেলা দেখতে বসবেন। কিন্তু ক্রিকেট ভক্তদের আশায় জল ঢেলে দিলেন তামিম-মুশফিকরা।
ডানেডিনের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে থিতু হতে পারেননি তাঁরা। ১০০ ওভারের ম্যাচ দুদল মিলে খেলেছে ৬৩.১ বল। ফলে সকাল ৯টার দিকেই খেলা শেষ। বাংলাদেশকে আট উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ভক্তদের আক্ষেপ, ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই শেষ বাংলাদেশের ম্যাচ।
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন রসিকতাই হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে। রসিকতা হবেই না বা কেন? একদিন আগেই তো বাংলাদেশ দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়ে গেছেন, ডানেডিনের ছোট মাঠে প্রচুর রান করা সম্ভব। এমনকি আগে বাংলাদেশের কোনো দল নিউজিল্যান্ডে যা করতে পারেনি, এবার সেটা করে দেখানোর আশা দেখালেন তিনি। অধিনায়ক তামিম ইকবাল আশা দেখালেন পেস বিভাগ নিয়েও।
অথচ হলো কী? বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে কে বলবে— ব্যাটিং বান্ধব এই মাঠেই এমন হতশ্রী ব্যাটিং করেছেন তামিম-মুশফিকরা? ব্যাট করতে নেমে ৪১.৫ ওভার পর্যন্ত উইকেটে থিতু হতে পেরেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে তুলেছে মাত্র ১৩১ রান। ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই নড়বলে ছিলেন তামিমরা, টাইমিং ঠিক ছিল না। খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডানেডিনের আকাশ মেঘলা ছিল। হালকা বাতাসও ছিল। ওই কন্ডিশনের সুবিধাটা বেশ ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন কিউই বোলাররা। ট্রেন্ট বোল্টের দারুণ সব সুইং, দীর্ঘদেহী কাইল জেমিসনের বাউন্সের সঙ্গে জিমি নিশামের বোলিং—সব মিলিয়ে কিউইদের সামনে রীতিমতো ভড়কে যায় বাংলাদেশ।
অথচ একই উইকেটে দারুণ ব্যাটিং করেছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছুঁতে মাত্র ২১.২ ওভার সময় নিয়েছে স্বাগতিকেরা। যেই পেসের আশা বাংলাদেশ কোচ দিয়েছেন, সেই পেস তেমন কার্যকারী ভূমিকা রাখতে পারেনি। ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে মুস্তাফিজকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেন মার্টিন গাপটিল। পরের বলে হাঁকান ছক্কা। এরপর বাংলাদেশি পেসারদের তুলোধুনো করে হেসেখেলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড।
ম্যাচ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে রসিকতা করছেন ভক্তরা। অপি নামের একজন লিখেছেন, ‘ঘুম থেকে উঠেই দেখি খেলা শেষ।’ সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন স্যাড ইমোজি।
তানহা মজুমদার নামের একজন লিখেছেন, ‘আমরা খেলতে যাইনি, শিখতে গিয়েছি। আর ভুল থেকে কীভাবে শিখতে হয় সেই শিক্ষা নিয়েছি।’ রহমান গাজি লিখেছেন, ‘হতাশা ছাড়া আর কিছু নেই। খুবই লজ্জাজনক।’
এমন অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন টিম ম্যানেজম্যান্ট নিয়েও। অনেকে আবার পরের ম্যাচের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। এই ম্যাচে জয় নিয়ে এরই মধ্যে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের পরের ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। ওই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে সিরিজ খোঁয়াতে হবে তামিমদের। এখন দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।
প্রথম ওয়ানডের সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪১.৫ ওভারে ১৩১ (তামিম ১৩, লিটন ১৯, সৌম্য ০, মুশফিক ২৩, মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মিরাজ ১, মেহেদি ১৪, তাসকিন ১০, হাসান ১, মুস্তাফিজ ১*; বোল্ট ৮.৫-০-২৭-৪, হেনরি ৯-১-২৬-১, জেমিসন ৮-১-২৫-০, নিশাম ৮-১-২৭-২, স্যান্টনার ৮-০-২৩-২)।
নিউজিল্যান্ড: ২১. ২ ওভারে ১৩২/২ (গাপটিল ৩৮, নিকোলস ৪৯*, কনওয়ে ২৭, ইয়াং ১১*; মুস্তাফিজ ৪-০-২৬-০, হাসান ৪.২-০-৪৯-১, তাসকিন ৪-০-২৩-১, মেহেদি ৬-০-১৭-০, মিরাজ ২-০-৯-০, সৌম্য ১-০-৫-০)।
ফল: ৮ উইকেটে জয়ী নিউজিল্যান্ড।