জিততে জিততে হেরে গেল বাংলাদেশ
ব্যাটিং ব্যর্থতায় বড় লক্ষ্য পায়নি বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে জিততে করতে হতো মাত্র ১২৫ রান। এই লক্ষ্য তাড়ায় জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু শেষ দিকে ম্যাচ জমিয়ে দেন শহিদুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ। জয়ের খুব কাছাকাছিও চলে যায় লাল-সবুজের দল। কিন্তু জয় পাওয়া হলো না। শেষের নাটকীয়তায় সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ৮ রান। বোলার ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারের প্রথম বলে ডট দেন তিনি। পরের দুই বলে আউট করেন সরফরাজ আহমেদ ও হায়দার আলীকে। তবে চতুর্থ বলে ছক্কা খেয়ে যান। পরের বলেই তুলে নেন আরেকটি উইকেট। ফলে শেষ বলে দরকার ছিল দুই রান। কিন্তু শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের স্বপ্ন ভাঙেন নেওয়াজ।
টানা জয়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান। ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাবর আজমের দল। এই প্রথম পাকিস্তানের কাছে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। আর সবমিলিয়ে দ্বিতীয়বার। এর আগে শেষ ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল লাল-সবুজের দল।
আজ সোমবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৪ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন নাঈম। কিন্তু এই রান করতেই ইনিংসের প্রায় অর্ধেক বল (৫০) খেলেছেন তিনি।
১২৫ রান তাড়া করতে শেষ দিকে সমীকরণ কিছুটা কঠিন হলেও সমীকরণ মিলিয়েছে পাকিস্তান। খুব সাবধানী ব্যাটিংয়ে শুরু করে তারা। এই ম্যাচেও অবশ্য থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক বাবর আজম। দলীয় ৩২ রানে তাঁকে হারায় পাকিস্তান। অধিনায়কের বিদায়েও জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
মোহাম্মদ রিজওয়ান ও হায়দার আলীর ব্যাটে চড়ে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় পাকিস্তান। তাদের ব্যাটিংও কিছুটা মন্থর ছিল। ৪৩ বলে ৪০ রান করেন রিজওয়ান। আর ৩৮ বলে হায়দার করেন ৪৫ রান। শেষ দিকে করেন সরফরাজ করেন ৬ রান, ইফতেখার ৬ রান ও নেওয়াজ করেন ৪ রান।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এই ম্যাচেও টস জিতেছে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো টস জিতে নিয়েছে ব্যাটিং। কিন্তু ওপেনিংয়ে এবারও সাফল্য পেল না স্বাগতিকরা।
আজ ওপেনিংয়ে নাঈমের সঙ্গে সুযোগ পেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু এতেও সাফল্য মেলেনি। পাকিস্তান একাদশে অভিষেক হওয়া শাহনওয়াজ দাহানির প্রথম ওভারেই আউট হয়ে যান শান্ত। দাহানির করা ফুল লেংথের বলে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন শান্ত। কিন্তু ব্যালেন্স হারিয়ে লাইন মিস করে ফেলেন। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল চলে যায় স্টাম্পে। ৫ বলে ৫ করে ফেরেন এই ব্যাটার। দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ। নাঈম ও শামীম হোসেন মিলে ওই জুটিতে তোলেন ৩০ রান। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষেই বোলিংয়ে এসে সেই জুটি ভেঙে দেন উসমান কাদির। বোলিংয়ে এসেই শামীমকে আউট করেন এই লেগ স্পিনার।
সপ্তম ওভারে কাদিরের বলে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন শামীম। কিন্তু টাইমিং ঠিক ছিল না। বল উপরে উঠে যায়, সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান ইফতেখার আহমেদ। ২৩ বলে চারটি বাউন্ডারিতে ২২ রান করেন শামীম। দলীয় ৩৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শামীম ফিরলে লড়াই জমান কিছুটা আফিফ হোসেন। নাঈমের সঙ্গে গড়েন ৪৩ রানের জুটি। এটিই আজকের সর্বোচ্চ জুটি। ১৫তম ওভারে ওই জুটিও ভাঙেন কাদির। ২০ রান করা আফিফকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান তিনি। এরপর শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে ১২৪ রানের পুঁজি পেতে সাহায্য করেন ওপেনার নাঈম। ওপেনিংয়ে নেমে প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও তাঁর ব্যাটিং ছিল অস্বস্তির। টি-টোয়েন্টির খেলায় তিনি ছিলেন টেস্ট মেজাজে। ৫০ বলে করেছেন ৪৭ রান। যার মধ্যে ছিল দুটি করে বাউন্ডারি ও ছক্কা। তাঁর ৫০ বলের ইনিংসে ২২টিই ছিল ডট বল। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ করেন ১৩ রান, মেহেদী করেন ৫ ও নুরুল হাসান করেন ৪ রান।
পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে ৩৫ রান দিয়ে দুটি নেন উসমান কাদির। ১৫ রান খরচায় সমান দুটি উইকেট নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। সমান একটি করে নেনে দাহানি ও হারিস রউফ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৪/৭ (নাঈম ৪৭, শান্ত ৫, শামীম ২২, আফিফ ২০, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সোহান ৪, মেহেদী ৫, আমিনুল ৩; দাহানি ৩-০-২৪-১, ওয়াসিম জুনিয়র ৪-০-১৫-২, রউফ ৪-০-০০-১, কাদির ৪-০-৩৫-২)।
পাকিস্তান : ২০ ওভারে ১২৭/৫ (রিজওয়ান ৪০, বাবর ১৯, হায়দার ৪৫, সরফরাজ ৬, ইফতেখার ৬, নেওয়াজ ৪, খুশদিল ০, (নাসুম ৪-০-২০-০, আমিনুল ৪-০-২৬-১, তাসকিন ৩.১-০-১৬-০, শহীদুল ৩.৫-০.৩৩-১, মেহেদী ৪-০-১৯-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-৩)।
ফল : ৫ উইকেটে জয়ী পাকিস্তান।
সিরিজ : ৩-০ ব্যবধানে জয়ী পাকিস্তান।