তাসকিনের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে বাংলাদেশের জয়
বৃষ্টি আইনে সমীকরণটা সহজ হয়ে পড়েছিল আয়ারল্যান্ডের। রান তাড়ায় শুরুটাও আগ্রাসী করে অতিথিরা। কিন্তু বাংলাদেশি পেসারদের সামনে টিকল না সেই ছন্দ। তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সামনে দাঁড়াতে পারল না আয়ারল্যান্ড। তাসকিনের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ সোমবার (২৭ মার্চ) প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সাকিব আল হাসানের দল।
আজ সোমবার (২৭ মার্চ) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ১৯.২ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৫ উইকেটে ২০৭ রান তোলে বাংলাদেশ।
সংগ্রহটা হতে পারতো আরও বড়। কিন্তু বৃষ্টি বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়ালেও দৈর্ঘ্য কমে যায় ম্যাচের। পরের ইনিংসে খেলা হয় মাত্র ৮ ওভার। এই ৮ ওভারে আইরিশদের সামনে লক্ষ্য পড়ে ১০৪ রানের।
এই রানের জবাবে শুরু থেকেই মারমুখি খেলে আয়ারল্যান্ড। প্রথম ওভারেই স্পিনার নাসুম আহমেদতে তুলোধুনো করে নেয় ১৮ রান। এরপরও মুস্তাফিজের বল থেকে নেয় ৯ রান। তুই ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৩২ রান তোলে আইরিশরা।
পল স্ট্রালিং ও অ্যাডয়ারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ছুটতে থাকে আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় ওভারেই এই ছন্দ থামিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। বোলিংয়ে এসেই তুলে নেন অ্যাডয়ারের উইকেট। পরের ওভারে তাসকিন হানেন জোড়া আঘাত। প্রথম ফেরান ট্যাকারকে। এরপর থামান স্টালিংয়ে ঝড় (১৭)। এই দুই ওভার মূলত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে আর হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ। ৮১ রানে আয়ারল্যান্ডকে থামিয়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
বল হাতে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। আগেরটি ছিল ২৫ রানে ৪ উইকেট। বাকি উইকেটটি নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
এর আগে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে বোলিং বেছে নেয় আয়ারল্যান্ড। তাতে মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ করে দুর্দান্ত শুরু। দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার মিলে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন সাগরিকায়। শুরুর জুটিতে বাংলাদেশ তোলে ৯১ রান।
এর মধ্যে পাওয়ার প্লেতেই আসে ৮১ রান। যেটা পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৬ রান, যেটা ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিল বাংলাদেশ।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে এই জুটি ভাঙতে পারে আইরিশরা। ৭.১ ওভারে ক্রেইগ ইয়ংয়ের স্লোয়ার বল মিড অফের ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু টাইমিং ঠিক হয়নি। ফিল্ডার পল স্টালিং ক্যাচ লুফে নিতে দেরি ভুল করেননি। ২৩ বলে ৪৭ করে বিদায় নেন লিটন। ৪৩ বলে ভাঙে ৯১ রানের জুটি।
লিটন ফিরলেও থিতু হয়ে যান রনি। উইকেটে ঝড় তুলে মাত্র ২৪ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৬৭ রানে থামে রনির ইনিংস। ১৩.৬ ওভারে গ্রাহাম হিউমের বলে লাইন পুরোপুরি মিস করেন রনি। সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় এ ওপেনারকে।
মাঝে উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৪ রানেই ফেরেন সাজঘরে। উইকেটে থিতু হয়ে বাজে শটে বিদায় নেন শামীম হোসেন। ২০ বলে দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩০ রানে ভাঙে তার প্রতিরোধ।
মিডল অর্ডারে দ্রুত কয়েক উইকেট হারালে কমে যায় বাংলাদেশের রানের গতি। তবে শেষ পর্যন্ত ভালো পুঁজিই পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ওভার শেষ করতে পারেননি। ১৯.২ ওভারে ২০৭ রানে থামতে হয় বাংলাদেশকে।
টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় দলীয় সর্বোচ্চ। এর আগের দুই দলীয় সর্বোচ্চ হলো ২১৫ ও ২১১ রান। আজ আগের দুই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ থাকলেও বৃষ্টির কারণে আর সম্ভব হয়নি।
তবে সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়া না হলেও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টির দলীয় সর্বোচ্চের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই মাঠের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার করা ১৯৬ রান। এবার সেটি ভেঙে বাংলাদেশের ২০৭ রানই এই ফরম্যাটে দলীয় সর্বোচ্চ।
দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন রনি তালুকদার। প্রথম হাফসেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া রনি ৩৮ বলে তিন ছক্কা ও সাত চারে করেন ৬৭ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ১৯.২ ওভারে ২০৭/৫ (লিটন ৪৭, রনি ৬৭, শান্ত ১৪, শামীম ৩০, তাওহিদ ১৩, সাকিব ২০, মিরাজ ৪; ট্যাক্টর ২-০-১৬-১ , অ্যাডয়ার ৩.২-০-৪৮-১, হিউম ৪-০-৩৫-১, ইয়ং ৪-০-৪৫-২ , ডেলানি ৩-০-২১-০, হোয়াইট ৩-০-৩৭-০)।
আয়ারল্যান্ড : বৃষ্টি আইনে ৮ ওভারে ৮১/৫ (স্টার্লিং ১৭, অ্যাডাইর ১৩, ট্রাকার ১, ট্যাক্টর ১৯, ডকরেল ০, ডেলানি ২১, ক্যাম্পার ১ ; নাসুম ১-০-১৮-০, মুস্তাফিজ ২-০-১৬-০, হাসান ২-০-২০-১, তাসকিন ২-০-১৬-৪, সাকিব ১-০-৫-০)।
ফল :বৃষ্টি আইনে ২২ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ : ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।