তাসকিন : মেঘ ফুঁড়ে উড়ে চলা বাংলার ফিনিক্স পাখি
বাংলার ক্রিকেটে মেঘের পরে এক টুকরো রোদ। পেস আক্রমণের অলিখিত রাজা। বলা হচ্ছে ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদের কথা। যার কথা এলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুঠাম গড়নের হাসিমাখা মুখ। ভেসে ওঠে হালকা ব্রাউন চুলে মাঠে নামা টগবগে যুবক। কিছুটা আবেগিও বটে। যিনি ২০১৯ বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পেয়ে কেঁদে ফেলেন শিশুর মতো। আবার গতির ঝড় তুলে ফিরে আসেন বাইশ গজে। সেই বাংলাদেশি তারকা তাসকিন আহমেদের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বাংলার গতি তারকা।
তাসকিন আহমেদের ওপর ভরসার পারদ দিন দিন ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে। যিনি ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই রাতের ঘুম কেড়েছিলেন! গ্যালারির অজস্র তরুণীর নয়, ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের। অবশ্য, অভিষেকের আগেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন চেনামুখ। ২০১২ সালে ইংল্যান্ড অনুর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে করা এক স্পেল ইউটিউবের কল্যাণে শান্তি দেয় কোটি চোখ জোড়াকে। নির্মাতা আদনান আল রাজীব আর লাক্স তারকা রাখির সিলন চায়ের একটি বিজ্ঞাপনের সংলাপ ছিল—‘কাপ শেষ তবু রেশ রয়ে যায়!’
তাসকিনের বেলায়ও অনেকটা তেমনই। সেই স্পেলের মুগ্ধতার রেশ রয়ে গেছে। অবশ্য সেসব এখন স্মৃতির কোটরে বন্দী। এরপর লাল সবুজের হয়ে আরও কতো উপলক্ষ্য তৈরি হয়েছে, সামনে তৈরি হতে অপেক্ষায় আরও অসংখ্য মুহূর্ত। ২০১৪ সালের জুনের ১৭ তারিখ বাঙালির চোখ ধাঁধিয়েছিলেন গতি দিয়ে। শুরুর সূচনা সংগীতে ছিল ঝাঁঝ, উদ্যম ও প্রতিভার বিস্ফোরণ। এরপর একে একে ৫৭ ওয়ানডে, ১২ টেস্ট ও ৫২ টি-টুয়েন্টিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মাশরাফীনামক কোমল বটবৃক্ষের ছায়ায় শানিত হয়েছেন। স্বপ্ন দেখেন, টেস্টে চারশ-পাঁচশ উইকেটের। তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হয়, গন্তব্য ঠিক করতে হয়। তাসকিনের দুটোই কমপ্লিট। এবার সেই পথে যে যাত্রা শুরু করেছেন তাতে পৌঁছানোর পালা।
তাসকিন আহমেদ ক্যারিয়ারে যত উইকেট পেয়েছেন সংখ্যাটা বাড়তে পারতো নিঃসন্দেহে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তার বলেই সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ছেড়েছেন ফিল্ডাররা। তাতে অবশ্য তাসকিনের মাহাত্ম্য কমেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিজস্ব একজন গতিতারকা আছেন, যার বলে চোখে সর্ষেফুল দেখেন বাঘা বাঘা ব্যাটাররা, এ আনন্দ কম কিসে!
আজকের দিনে জন্মেছিলেন স্থপতি ফজলুর রহমান খান, যার মাথায় ভর দিয়ে মানবজাতি সুউচ্চে উঠার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছে! যুক্তরাষ্ট্রের সিয়ার্স টাওয়ার, পেট্টোনাস টাওয়ার, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার মতো ভবন গুলোর অন্যতম স্থপতি এই ব্যক্তি বেঁচে রবেন তার স্থাপত্যের চূড়ায়, অনন্তকাল। তাসকিনেরও জন্ম একই দিনে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের অলিতে গলিতে বেড়ে ওঠা ভবনগুলো কিংবা চায়ের দোকানের পর্দায় চোখ রাখা মানুষগুলোও নিশ্চয়ই টিভি দেখতে দেখতে বহুবার বলে উঠেছে—আরে আমাদের তাসকিন আজ আবার আকাশ ছুঁয়েছে। আকাশ তো কতভাবেই স্পর্শ করা যায়!
ফজলুর রহমান আর তাসকিনকে মিলিয়ে ফেলা মনে হতে পারে বাড়াবাড়ি। বাড়াবাড়ির এই রথে চড়েই ক্রিকেট বাংলাদেশ আজ স্বপ্নচারী পাখি। এপ্রিল ০৩, ১৯৯৫। বছর আটাশেক আগে বাংলার ক্রিকেটের এমন একটা সম্পদ পৃথিবীর আলো দেখেছিল, যার আলোয় আজ বহু স্বপ্নবাজ তরুণ আলোকিত। কেউ বাউন্সারে, কেউ ইয়র্কারে, কেউবা গতির ঝড় তুলে হতে চান উইকেট পাওয়ার পর দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে উড়তে থাকা ফিনিক্স পাখি তাসকিন আহমেদের মতো।