পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করে হারল বাংলাদেশ
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বড় পুঁজি পায়নি বাংলাদেশ। নাঈম-সাইফদের হতাশার দিনে দুর্দান্ত খেলেছেন বাংলাদেশি বোলাররা। দাপুটে বোলিংয়ে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন তাঁরা। কিন্তু অল্প পুঁজি নিয়ে শেষ পর্যন্ত পারল না স্বাগতিকরা। লড়াই করেও সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে চার উইকেটে হারল বাংলাদেশ। এই জয়ের সুবাদে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাবর আজমের দল।
আজ শুক্রবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান গড়ে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন আফিফ হোসেন। জবাব দিতে নেমে চার বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। টিকতে পারেননি পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশি পেসারের বল আউট সুইং করবে ভেবে ব্যাট বাড়ান রিজওয়ান। কিন্তু বল একটু ভেতরে ঢুকেই আঘাত হানে স্টাম্পে। ১১ বলে ১১ রান করে বিদায় নিয়েছেন পাকিস্তানের তারকা ব্যাটসম্যান।
মুস্তাফিজের পরের ওভারেই আরেক পাকিস্তানি ওপেনারকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। তিনিও বাবর আজমকে বোল্ড করেন। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে থাকা বাবর-রিজওয়ান দুজনেই আজ ব্যর্থ হলেন।
দুই ওপেনারকে হারানোর পর ব্যর্থ হন হায়দার আলীও। উইকেটে গিয়ে রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি। মেহেদী হাসানের বল সুইপ করেছিলেন হায়দার। কিন্তু ব্যাটে খেলতে পারেননি। এলবির আবেদন তোলে বাংলাদেশ। সেই আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েছিলেন হায়দার। কিন্তু সফল হননি। দলীয় ১৬ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
সতীর্থদের আশা-যাওয়ার মাঝেই রানআউট হন শোয়েব মালিক। পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৪ রান তোলে সফরকারীরা।
পাকিস্তান দ্রুত ৪ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের দখলেই ছিল ম্যাচ। কিন্তু উইকেটে থাকা ফখর জামান সেটা হতে দেননি। পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তিনি। পাকিস্তানের সমীকরণ সহজ করে দিয়ে ১৫তম ওভারে ফেরেন তিনি। ৩৪ রান করে ফখর ফেরার পর আশা জাগে বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ দিকে বাংলাদেশের আশা ভেস্তে দিয়ে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলীয় ৩ রানের মাথায় বিদায় নেন ওপেনার নাঈম। দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলীর করা প্রথম বলটিতেই ধরা পড়েন নাঈম। পাকিস্তানি বোলারের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে বল জায়গায় দাঁড়িয়েই ব্যাট চালান নাঈম। কিন্তু টাইমিং গড়বড়ে ছিল। বল চলে যায় কিপারের হাতে, ১ রানে বিদায় নেন নাঈম।
নাঈমের পর হতাশ করেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। অভিষেকে তিনি করেন কেবল ১ রান। পরের ওভারে বাজে বল খেলতে গিয়ে আউট হন সাইফ। মোহাম্মদ ওয়াসিমের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের একটু লাফানো বলে খোঁচা দিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ১ রান করা সাইফের ব্যাটিংও ছিল অস্বস্তিদায়ক। টি-টোয়েন্টিতে ১ রান তুলতে সাইফ খেলেন ৮ বল।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর হাল ধরতে পারেননি নাজমুল শান্তও। লম্বা সময় পর টি-টোয়েন্টিতে ফেরা শান্ত খেললেন মাত্র ৭ রানের ইনিংস। মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলেই জায়গা করে নিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ফিরতি ক্যাচ মুঠোয় জমান ওয়াসিম।
পাওয়ার প্লেতে শুধু হতাশাই দেখে বাংলাদেশ। প্রথম ছয় ওভারে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৫ রান, হারায় ৩টি উইকেট। এর মধ্যে বাউন্ডারি মাত্র একটি।
তিন উইকেট হারানোর পর আফিফ হোসেনের সঙ্গে কিছুটা আশা জাগান মাহমুদউল্লাহ। সেটিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মোহাম্মদ নওয়াজের ডেলিভারিতে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। ১১ বলে ৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ভাঙে ২৬ বলে ২৫ রানের জুটি।
এরপর বাকিদের নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন নুরুল ও আফিফ। দুই ছক্কায় ২২ বলে ২৮ রান করে ফেরেন নুরুল। আফিফ ফেরেন ৩৬ রানে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা দ্রুত ফিরলে শেষ দিকে টেলএন্ডারদের নিয়ে নির্ধারিত ওভারে স্কোরবোর্ডে ১২৭ রান তোলেন মেহেদী হাসান। ২০ বলে ৩০ রান করেন তিনি।
পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে ২২ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন হাসান আলী। ২৭ রান খরচায় এক উইকেট পান নেওয়াজ। ২৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। শাদাব খানের শিকার একটি।