ফুটবলের সৌন্দর্য দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল
নেইমার ফিরেছেন দলে, সঙ্গে ফিরেছে জয় এবং উদযাপন। দ্বিতীয় পর্বে দক্ষিণ কোরিয়াকে নাস্তানাবুদ করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ব্রাজিল। মাঠের ফুটবল কত দুর্দান্ত হতে পারে, ব্রাজিল তারই প্রমাণ দিয়ে দ. কোরিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে। সেলেসাওদের পক্ষে এ দিন গোল পেয়েছেন ভিনিসিয়াস, নেইমার, রিচার্লিসন এবং পাকেতা। কোরিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন পাইক সেউং-হো।
সোমবার দিবাগত রাত ১টায় কাতারের স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ মাঠে নেমেছিল ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথমার্ধে কোরিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের লিড পেয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ছন্দে ফেরার চেষ্টা করে ব্রাজিল। তবে সেলেসাওরা তখন কিছুটা ধীর ফুটবল খেলছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের ৪৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল দ. কোরিয়া। তবে প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন স্ট্রাইকার সন হিউং-মিন। সে সময়ে গোল বাঁচিয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন অ্যালিসন।
৬১ মিনিটে রাফিনহা গোলের সহজ সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন। না হলে ব্রাজিল আরও একটি গোল পেতে পারত। ৬৭ মিনিটে ব্রাজিলের গোলের সামনে পাঁচবার আক্রমণ চালিয়েও গোল আদায় করতে পারেনি দ. কোরিয়া। ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন এবং রক্ষণভাগের কল্যাণে তখন গোল হয়নি।
তবে ৭৫ মিনিটে একমাত্র গোলের দেখা পেয়েছিল দ. কোরিয়া। পাইক সেউং-হোর গোলটি হয়তো হারের ক্ষততে একটুখানি সান্তনার প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। অবশ্য ৭৯ মিনিটে আবারও দুর্দান্ত সেভ করে কোরিয়ানদের গোল বঞ্চিত করেন অ্যালিসন। শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।
এ দিন প্রথমার্ধের শুরু থেকেই ব্রাজিলকে চাঙ্গা মনে হচ্ছিল। গ্রুপ পর্বের ব্রাজিল থেকে আলাদা এক আভাস পাওয়া যাচ্ছিল দ্বিতীয় পর্বে। সেই আভাসের বাস্তবায়ন ঘটেছিল ৬ মিনিটেই। রাফিনহা অসাধারণ দক্ষতায় কোরিয়ার রক্ষণভাগকে পরাস্ত করে বল দিয়েছিলেন বাঁ প্রান্তে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। ভিনি বল পেয়ে পজিশন ঠিক করে উড়িয়ে মেরেছিলেন গোলে। অমনি শুরু হলো উদযাপন। এই উদযাপন নতুন দেখলো কাতার বিশ্বকাপ। সতীর্থরা কাঁধে হাত দিয়ে গোল হয়ে একসঙ্গে পা দুলিয়ে উদযাপন। যেন ফুটবল মাঠে সাম্বার ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দিল নেইমার শিবির। ব্রাজিল তখন এগিয়ে গিয়েছিল ১-০ গোলে।
কিছুক্ষণ পরে শাপে বর পেয়েছিল ব্রাজিল। ১০ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার ডি-বক্সের মধ্যে রিচার্লিসনকে ফাউল করে বসেন কোরিয়ার জং উ-ইয়ং। তাতে পেনাল্টি পায় সেলেসাওরা। নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে পেনাল্টি শুট করেছিলেন নেইমার। বলের ধাক্কায় কেঁপে উঠেছিল দ. কোরিয়ার জাল। কানের দুইপাশে হাত উচিয়ে খানিকটা জিহ্বা বের করে উদযাপন করলেন নেইমার।
দুই গোল হজম করে নেইমার হয়তো সতীর্থদের বললেন, আস্তে বন্ধুগণ রাস্তা অনেক বাকি! কিছুটা আক্রমণের জোর কমিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো ব্রাজিল শিবির। সেই মুহূর্তে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়েছিল দ. কোরিয়া। ১৬ মিনিটে কোরিয়ান স্ট্রাইকার হোয়াং হি-চ্যানের বলটি লাফিয়ে গোলমুখ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন অ্যালিসন। তাতে গোল বঞ্চিত হয়েছে কোরিয়া। এ সময় আরও কয়েকবার আক্রমণে নেমেছিল তারা, ফল ছিল গোলহীন।
২৮ মিনিটে ব্রাজিল পেয়েছিল তৃতীয় গোলের দেখা। রিচার্লিসন কোরিয়ার রক্ষণ থেকে যে কৌশলে বল দখল করে সতীর্থকে দিয়েছিলেন তাকেই হয়তো ফুটবল শৈলী বলে। থিয়াগো সিলভার সহায়তা নিয়ে জালে বল ঢোকানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন রিচার্লিসন নিজেই।
ব্রাজিলের বিপক্ষে অসহায় মনে হচ্ছিল দক্ষিণ কোরিয়াকে। সেই অসহায়ত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন লুকাস পাকেতা। ৩৫ মিনিটে ভিনিসিয়াসের ক্রসে গোল করেছিলেন পাকেতা। শেষ পর্যন্ত এই চারটি গোল নিয়ে ও একটি গোল হজম করে মাঠ ছাড়ে সেলেসাওরা।
আগামী ৯ ডিসেম্বর রাত ৯টায় কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।