বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দক্ষিণ আফ্রিকার হাসি
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন তাসকিন আহমেদ। করমর্দন পর্ব সেরে মুস্তাফিজকে নিয়ে বেশ খানিকটা সময় ক্রিজে দাঁড়িয়ে কথা বললেন। দুই পেসার কী বললেন নিজস্ব আলাপে? হতে পারে ভাবছেন, একই উইকেট অথচ ভিন্ন আচরণ! বাংলাদেশ যখন বোলিংয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার তখন খুনে ব্যাটিং। বাংলাদেশ যখন ব্যাটিংয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার আগুনঝরা বোলিং। পেস, স্পিন দুই বিভাগেই কুপোকাত বাংলাদেশ।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইতিহাসে প্রথমবার খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ দলের সঙ্গী ছিল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান, সঙ্গী ছিল দেড় দশক পর ফিরে পাওয়া প্রত্যয়। দক্ষিণ আফ্রিকার যেখানে হাহাকার, প্রথম দিন জিততে জিততেও শূন্য হাতে ফেরা! মাঠের খেলায় এর উল্টো চিত্র। বাংলাদেশ ইতিহাস গড়তে না পারলেও ইতিহাসের সাক্ষী হলো। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম শতক হাঁকালেন রাইলি রুশো।
সিডনিতে বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা খারাপ হয়নি। সেটি ধরে রাখতে পারেননি টাইগাররা। মুস্তাফিজুর রহমান উইকেটশূন্য থাকলেও মাপা বোলিং করে চেষ্টা করেছেন আফ্রিকার রানের গতি শ্লথ করতে। বাকিরা পুরোদমে ব্যর্থ। তাসকিন এদিন আশাহত করেছেন। আগের দিনের নায়ক এদিন দিলেন সবচেয়ে বেশি রান! আর এতেই হেসেখেলে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে নেয় ২০৫ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ।
এমন রান টপকাতে প্রয়োজন ঝোড়ো শুরু। শুরুর ওভারে সৌম্য সরকারের জোড়া ছয়ে আভাস মিলেছে, হয়তো লড়তে প্রস্তুত বাংলাদেশ। তবে বেশি সময় লাগেনি আভাস মিথ্যে হতে। এরপর শুরু আসা-যাওয়ার পুরনো মিছিল। ব্যাটারদের নিয়ে, বিশেষত ওপেনারদের কাছে সাকিব খোলাখুলিভাবে চেয়েছেন, কেউ একজন যেন ১৫ ওভার পর্যন্ত থাকে ক্রিজে। লিটন দাস একপ্রান্ত আগলে টিকে ছিলেন বটে, আফ্রিকার বোলারদের সামনে সুবিধা করতে পারেননি! দলীয় সর্বোচ্চ ৩৪ করলেও তা অপাত্রেই গেল!
১০৪ রানের পরাজয়। পরিসংখ্যান মতে, এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের লজ্জা। দক্ষিণ আফ্রিকার আবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় এটি! সিডনির পেস বান্ধব পিচে আজ ধরতে পারে স্পিন, এমনটি শোনা যাচ্ছিলো কাল থেকে। আফ্রিকাও আভাস দিয়েছে একজন স্পিনার বেশি খেলানোর। তাব্রিজ শামসি সুযোগ পেয়ে চেপেই ধরলেন টাইগারদের। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। আরেক স্পিনার কেশব মহারাজ উইকেট পেলেন ১টি, রান খরচায় তিনিও কৃপণতা করলেন। ৪ ওভারে দিলেন ২৪ রান। গতির ফলায় এনরিখ নরকিয়া করলেন ৪ শিকার, বিনিময়ে ৩.৩ ওভারে রান দিয়েছেন মোটে ১০!
টি-টোয়েন্টিতে মোমেন্টাম বলে একটা টার্ম আছে, সাকিব সবসময়ই বলেন মোমেন্টাম ধরতে হবে। আজ ধরতে ব্যর্থ পুরো দল। ব্যাট হাতে রাইলি রুশো, বল হাতে নর্জে শামসিরা ছেলেখেলা করলেন বাংলাদেশকে নিয়ে। জিম্বাবুয়ে ম্যাচের হতাশা কাটাতে বেছে নিল টাইগারদের, চূর্ণ করল আত্মবিশ্বাস! টেবিলে এখন এক নম্বরে তারা, বাংলাদেশ তিনে।
আরও তিন ম্যাচ বাকি। মোমেন্টাম ধরতে হবে। জিততে হবে। দল হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে প্রতিপক্ষের উপর। না পারলে অন্তত শরীরী ভাষায় তেজ আনতে হবে। নইলে বড় দলগুলোর কাছে এভাবেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে হবে বারবার!