‘বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট এখন রিহ্যাব সেন্টার'
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আশা জাগিয়েও হেরে যায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর কিছু সিদ্ধান্ত ও লিটন দাসের ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে হয়েছে পুরো দলকে। হারের পর খেলোয়াড়দের সমালোচনায় শুনতে হচ্ছে। অনেকে ক্রিকেটারদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা হারের জন্য শুধু ক্রিকেটারদেরই দায় দিচ্ছেন না, তিনি কাঠগড়ায় তুললেন টিম ম্যানেজমেন্টকেও।
ম্যাচের পরিস্থিতি ও টিম ম্যানেজম্যান্টের ভূমিকাগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লম্বা স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাশরাফী। তাঁর মতে, হারের দায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বা ক্রিকেটারদের একার নয়। দায়িত্ব নিতে হবে টিম ম্যানেজম্যান্টকেও।
সাবেক অধিনায়ক মাশরাফীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো—
‘ম্যাচের একদিন পার হয়ে গেল কতো কথা শুনলাম যার অনেক কিছুরই যুক্তি আছে। কারণ দল হেরে গেলে মানুষ তার প্রতিক্রিয়া নিজের মতো করে দেবে এটা স্বাভাবিক। আমার মনেও অনেক কিছু এসেছে। তবে দুটি জিনিস খুব বেশি মনে হচ্ছে। ম্যাচটা হারার জন্য শুধুই মাহমুদউল্লাহ আর লিটনই দায়ী? আর কোনো বিষয় কী নেই?
আমার যে বিষয়টি মনে হয়েছে সেটা হলো :
১. ম্যাচের ৯.৪ ওভার ৭৯ রানে ওদের ৪ উইকেট, ঠিক তখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী পানি পানের বিরতি। তার মানে কোচ তখন মাঠের ভেতর আসবে। আমাদের কোচও এসেছিল। তাহলে উনি এসে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কী কথা বলেছিলেন। যদি বলে থাকেন তাহলে সব দায় মাহমুদউল্লাহর? মানলাম অন ফিল্ডে ক্যাপ্টেন কল ইজ ফাইনাল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কোচ আলোচনা করেন না? কারণ ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্ল্যান জানতে চেয়েছিলেন কোচ? আর যদি কথা হয়ে থাকে, তাহলে কোচের প্রেস হ্যান্ডেল করা উচিত ছিল কি না?
কারণ অধিনায়কের ভুলটা ধরা হয়েছে ঠিক ঐ সময় থেকেই। কারণ ১১ নাম্বার ওভার করে মেহেদী দলের মূল বোলার। ১২ নাম্বার ওভার করে রিয়াদ সম্ভবতো ৫-৬ রান দেয়, ১৩ নাম্বার ওভারে আফিফ ১৫ রান দেয়। কিন্তু রিয়াদ যে চিন্তা থেকে আফিফকে বলে এনেছিল সেটাতেও কিন্তু সুযোগ তৈরি হয়েছিল। যদি সুযোগ হাতছাড়া না হতো তাহলে আমরা বলতাম, দারুণ ক্যাপ্টেন্সি। ক্যাচ মিসের অযুহাত না দিলেও এটাই সত্য ক্যাচ মিস এই প্রথম হয়নি, আর লিটন দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন। কোনো কোনো সময় ভাগ্যটাও সঙ্গে থাকতে হয়।
দল সফল না হওয়ার কারণে এই দুজনকে এতোটা তুলোধুনো করা কতোটা ঠিক। এ কারণেই আমার মনে হয়েছে, যদি কোচ এ বিষয়ে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কথা না বলে থাকেন, তাহলে তো ব্রেকের সময় দলের টিম বয়কেই মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া যায়। তা না হলে কোচের প্রয়োজন কি?
২. ম্যাচের আগে উইকেট পর্যবেক্ষণ শুধু ক্যাপ্টেন করে না, পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট সঙ্গে থাকে। একাদশ করার সময় চিন্তা করা হছে উইকেট স্লো হবে, যে কারণে তাসকিনকে বসিয়ে নাসুমকে খেলানো হয়। কিন্তু নাসুমকে পাওয়ার প্লের পর বোলিং করানো হলো না। কারণ দুজন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান উইকেটে। তাহলে আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল শ্রীলঙ্কার টপঅর্ডারে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান বেশি। কোচ কি কোনো প্ল্যান করে না, শুধু খেলা দেখে? আবারও বলছি সিদ্ধান্ত অধিনায়ক নেবে, কিন্তু ওকে সাহায্য করতে হবে। কারণ মাঠে ক্যাপ্টেন কখনও কখনও অসহায় হয়ে পড়ে। আর ঠিক তখনই টিম ম্যানেজমেন্টকে সাহায্য করতে হয়। অন্যান্য দলে তো তাই দেখি।
৩. লিটনের ক্যাচ মিসের বিষয়ে কোনো এক্সকিউজ দেব না। এমনকি লিটন নিজেও দেবে না। তবে ক্যাচ মিস খেলার একটা অংশ। কিন্তু ফিল্ডিং কোচের কাছে কি এ বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়? ক্যাচ মিস কি এই প্রথম হল? ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ম্যানেজমেন্টের প্রায় সবাই চাকরি হারিয়েছে, স্রেফ বর্তমান ফিল্ডিং কোচ ছাড়া। তাহলে আমরা বিশ্বকাপে বা তারপর কি সেরা ফিল্ডিং সাইড হয়ে গিয়েছি?
এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার। যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসঙ্গে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ, কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে দাঁড়াল কি? তারা যতদিন থাকবে আর মন যা চাইবে তাই করবে। হেড কোচ এক এক করে নিজ দেশের সবাইকে আনছে এরপর যারা অস্থায়ীভাবে আছে তাদেরও সরাবে আর নিজের মতো করে ম্যানেজমেন্ট সাজাবে। তাও মেনে নিলাম কিন্তু রাসেল (হেড কোচ) ম্যানেজমেন্টের জন্য যেভাবে কাজ করে, মূল দলের জন্য তাহলে লুকিয়ে কেন। কেন তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ভালো থাকে না। এটা ঠিক করা তার কাজ না?
তারপরও দায় খেলোয়াড়দেরকেই নিতে হয়। এটাই স্বাভাবিক, কারণ মাঠে তারাই খেলে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে খেলোয়াড়দেরকে সেরকম পরিবেশ করে দিতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে তাদের বিপদে কেউ পাশে না থাকুক অন্তত টিম ম্যানেজমেন্ট থাকবে।
আমি আমার ক্যাপ্টেনসির শেষ প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলাম, এই দলের কোচ যেই হোক না কেন, এখন এই দলের রেজাল্ট করার সময়, এক্সপেরিমেন্টের না। কোচের চাহিদা মেটানোর আগে আমাদের দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। কারণ ক্রিকেট দেশের মানুষের কাছে এখন স্রেফ খেলা নেই, রীতিমতো আবেগে পরিণত হয়েছে।
ভালো করুক আমার প্রিয় দল। আল্লাহ সহায় হোন আমাদের।’