বাবরের সেঞ্চুরিতে করাচি টেস্টে রোমাঞ্চের আভাস
করাচি টেস্টের প্রথম তিন দিন ছিল চরম ম্যাড়ম্যাড়ে। যেখানে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দাপুটে ব্যাটিং দিয়ে পাকিস্তানকে খুব ভুগিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দুই ইনিংস মিলিয়ে পাকিস্তানি বোলারদের প্রায় ২১২ ওভার বোলিং করিয়েছে অসিরা। স্বাগতিকদের ক্লান্ত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে শেষ পর্যন্ত ইনিংস ছেড়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসের লিড মিলিয়ে পাকিস্তানকে মোট ৫০৬ রানের বিশাল টার্গেট দিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল।
গতকাল মঙ্গলবার চতুর্থ দিন এ বিশাল রানের লক্ষ্য নিয়ে পাকিস্তান যখন ব্যাটিংয়ে নামে, তখন তাদের নিয়ে আশা ছিল কম মানুষেরই। কারণ কার্যত এ রান টপকানো অসম্ভব। এমনকি প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৮ রানে অলআউট হওয়া পাকিস্তানের পক্ষে ড্র করাও এক রকমের অসম্ভবের মতো ছিল। কিন্তু, সে অসম্ভবকে কিছুটা হলেও সম্ভব করার আভাস দিচ্ছে পাকিস্তান।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন দলটির অধিনায়ক বাবর আজম। তাঁর সঙ্গে ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন আবদুল্লাহ শফিক। দুই ব্যাটারের চমৎকার জুটিতে রোমাঞ্চ জাগছে করাচিতে।
কাল দিন শেষে ২ উইকেটে ১৯২ রানে টিকে ছিল পাকিস্তান। সেঞ্চুরিয়ান বাবর আজম ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ৭১ রানে উইকেটে ছিলেন শফিক। এখনও ৩১৪ রানে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। ম্যাচ বাঁচাতে হলে আজ বুধবার পুরো দিন টিকে থাকতে হবে পাকিস্তানকে। আর জিততে হলে স্কোরবোর্ডে তুলতে হবে আরও ৩১৪ রান। এবার শেষ দিনে কোন রোমাঞ্চ হয়, সেটাই দেখার।
পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার করাচি টেস্টে দুই রকম চিত্র দেখছে ক্রিকেট ভক্তরা। টেস্টের প্রথম দিন থেকে ব্যাটের সঙ্গে বলের অসম প্রতিযোগিতা ছিল। লম্বা সময় ব্যাটিং করে পাহাড়সম সংগ্রহ তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এমন ব্যাটিংয়ের ফলে ম্যাচের দুই দিন যেতে না যেতেই ড্রয়ের আভাস দিচ্ছিল করাচি টেস্ট।
কিন্তু, গত সোমবার তৃতীয় দিন আসতেই এ করাচিতে দেখা গেল ভিন্ন রূপ। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা রীতিমতো যে উইকেটে রানের জোয়ারে ভাসছিল, সে উইকেটেই মুখ থুবড়ে পড়ল পাকিস্তানের ইনিংস।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে গতকাল অসিদের বোলিং তোপে মাত্র ১৪৮ রানেই থেমে গেল পাকিস্তান। মিচেল স্টার্ক-মিচেল সোয়েপসনদের বোলিংয়ের সামনে স্বাগতিকদের অবস্থা নাজেহাল।
উইকেটে টিকতেই কষ্ট হয়েছিল পাকিস্তানের ব্যাটারদের। সর্বোচ্চ ১৫৪ মিনিট টিকতে পেরেছেন বাবর আজম। এ সময়ে সর্বোচ্চ রানও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই। পাকিস্তানের অধিনায়ক করেন ৭৯ বলে খেলে ৩৬ রানের ইনিংস। বাকিদের মধ্যে দুজন কেবল ২০ রান করে করতে পেরেছেন। আর সবাই মেতেছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
মিচেল স্টার্ক ২৯ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। সোয়েপসন ৩২ রান খরচায় পেয়েছেন দুটি উইকেট। সমান একটি করে পেয়েছেন প্যাট কামিন্স, নাথান লায়ন ও ক্যামরুন।
অথচ এর আগে এ উইকেটে ব্যাট করেই প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া। এই উইকেটেই ৫৫৬ মিনিট ব্যাট করেছেন উসমান খাজা। ৩৬৯ বলে ১৬০ রানের চমৎকার ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। তিনি ছাড়া বাকিরাও রান পেয়েছেন বেশ।
অবশ্য পাকিস্তানকে অল্পতে থামিয়েও ফলোঅনে পাঠায়নি অস্ট্রেলিয়া। বরং নিজেরা আবার ব্যাটিংয়ে নামে। পাকিস্তানের বোলারদের আরও ক্লান্ত বানিয়ে ছাড়ে। শেষ পর্যন্ত কাল চতুর্থ দিনে ৯৭ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ছাড়ে অসিরা। ফলে পাকিস্তানের সামনে টার্গেট দাঁড়িয়েছে ৫০৬ রানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ১৮৯ ওভারে ৫৫৬/৯ ডিক্লে. (আগের দিন ৫০৫/৮) (স্টার্ক ২৮, কামিন্স ৩৪*, সোয়েপসন ১৫*; আফ্রিদি ৩২-৮-৯৫-১, হাসান ২৫-৭-৭১-১, ফাহিম ২১-৪-৫৫-২, সাজিদ ৫৭-১০-১৬৭-২, নুমান ৪৮-৬-১৩৪-১, বাবর ৪-০-৭-১, আজহার ২-০-১০-০)।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৫৩ ওভারে ১৪৮ (শফিক ১৩, ইমাম ২০, আজহার ১৪, বাবর ৩৬, ফাওয়াদ ০, রিজওয়ান ৬, ফাহিম ৪, সাজিদ ৫, হাসান ০, নুমান ২০*, আফ্রিদি ১৯; স্টার্ক ১৩-৫-২৯-৩, কামিন্স ১৯-২-৩৯-১, লায়ন ৯-৫-১৩-১, সোয়েপসন ৯-১-৩২-২, গ্রিন ৮-১-২৩-১, লাবুশেন ১-০-৪-০)।
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস : ২২.৩ ওভারে ৯৭/২ (খাওয়াজা ৪৪*, ওয়ার্নার ৭, লাবুশেন ৪৪; আফ্রিদি ৬.৩-০-২১-১, হাসান ৭-০-২৩-১, সাজিদ ৫-০-৩১-০, ফাহিম ৩-০-১৩-০, নুমান ১-০-৭-০)।
পাকিস্তান ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৫০৬) ৮২ ওভারে ১৯২/২ (শফিক ৭১*, ইমাম ১, আজহার ৬, বাবর ১০২*; স্টার্ক ১২-৫-২৯-০, কামিন্স ১৩-৫-৩৫-০, সোয়েপসন ২৭-৬-৫৭-০, লায়ন ২২-৪-৫০-১, গ্রিন ৮-২-১৫-১)।