বিজয়ের মাসে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় বাংলাদেশের
দীর্ঘ সাত বছর পরে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই আসল এ বিজয়। তিন ম্যাচ ওয়ানডেতে একটি হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল লিটন-সাকিবরা। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করল লাল সবুজের দল। সিরিজের শেষ বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ভারতকে হোয়াটওয়াশ করার।
আজ বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-ভারত। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক লিটন দাস। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে মিরাজের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ করেছিল ২৭১ রান। জবাবে ব্যাটে নেমে নির্ধারিত ওভারে ২৬৬ রানে থামে ভারত। শেষ দিকে জয়ের আশা জাগানো রোহিত ২৮ বলে ৫১ রানের চমৎকার ইনিংস উপহার দেন।
২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৬৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়েছিল লোকেশ রাহুলরা। পরে দলের বিপদের মুহূর্তে হাল ধরেন শ্রেয়াস আইয়ার এবং অক্ষর প্যাটেল। দুজনের ১০৭ রানের জুটিতে ভারত শক্ত অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। ভারতের বড় এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। ভারতের ১৭২ রানে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন শ্রেয়াস। তিনি ১০২ বলে ৮২ রান করেছিলেন, যা সাজানো ছয় বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায়।
৩৮.২ ওভারে এবাদতের বলে অক্ষর প্যাটেল আউট হলে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। অক্ষর ৫৬ বলে ৫৬ রান করে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন। ৫৬ রানের ইনিংসে ছিল দুটি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কার মার। পরে উইকেটে শার্দুল ঠাকুর ও দীপক চাহার ধীরে রান তোলার চেষ্টা করেছিলেন। সে যাত্রাও থামান মুশফিক।
৪২.৪ ওভারে ভারতীয় ২০৭ রানে সাকিবের বলে শার্দুল ঠাকুরকে (৭) স্ট্যাম্পিং করেন মুশফিকুর রহিম। পরে চোট নিয়েই ব্যাটে নামেন রোহিত শর্মা। ৪৬তম ওভারে এবাদত বল করতে এসে প্রথমেই দীপক চাহারকে (১১) আউট করেন। তবে পরের পাঁচ বল থেকে ১৮ রান দেন। যার মধ্যে রোহিত মারেন দুটি ছক্কা ও একটি চার। শেষ দিকে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা হতে দেয়নি।
এর আগে ব্যাটে নেমে দলীয় ৭ রানে ওপেনার বিরাট কোহলিকে (৫) আউট করেছিলেন এবাদত হোসেন। ৬ রান পরেই আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ান (৮) আউট হয়েছিলেন। ২.৫ ওভারে মুস্তাফিজের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপরে ৪৩ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার এবং ওয়াশিংটন সুন্দর।
সাকিব দশম ওভারের শেষ বলে আইয়ার-ওয়াশিংটনের জুটি ভাঙেন। ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল ভারত। দলকে চাপমুক্ত করতে হাল ধরেছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল। ৫১ বলে ২৬ রানের জুটি গড়লে সেটিও ভেঙে দিয়েছিলেন মিরাজ। ১৮.৩ ওভারে লোকেশ রাহুলকে (১৪) এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়েছিলেন মিরাজ। তবে শ্রেয়াস আইয়ার এবং অক্ষর প্যাটেলের জুটিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারত। সে যাত্রাও থামাতে সফল হয়েছিল বাংলাদেশি বোলাররা।
প্রথম ইনিংসে মিরাজের সেঞ্চুরির পাশাপাশি মাহমুদউল্লাহর হাফ সেঞ্চুরি এবং নাসুমের ভালো ফিনিশিংয়ে ভারতকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এ দিনও ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ১৯ ওভারের মধ্যে ৬৯ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের হাল ধরেছিলেন মেহেদি-মাহমুদউল্লাহ। তাঁদের জুটিতে ১৬৫ বলে ১৪৮ রান আসে। তাতেই ভর করে খাদের কিনারা থেকে ধীরে ধীরে রানে ফিরেছিল বাংলাদেশ।
১৪৮ রানের মেহেদি-মাহমুদউল্লাহর জুটি ভেঙেছিলেন উমরান মালিক। ৪৬ দশমিক ১ ওভারে দলীয় ২১৭ রানে মালিকের বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ৯৬ বলে সাত বাউন্ডারি মেরে ৭৭ রান করে আউট হন তিনি।
রিয়াদের পরে উইকেটে এসে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছিলেন নাসুম আহমেদ। সঙ্গ দিয়েছিলেন মিরাজও। ৫০তম ওভারের শেষ বলে মিরাজ করলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। সেটিও আবার ভারতের বিপক্ষে। ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেছিলেন মিরাজ। শত রানের ইনিংসে ছিল আট বাউন্ডারি ও চারটি ছক্কার মার। আর মেহেদি-নাসুম মিলে করেছিলেন মাত্র ২৩ বলে ৫৪ রানের জুটি। তাতে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ২৭১ রানের সংগ্রহ পায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭১/৭ (এনামুল ১১, লিটন ৭, শান্ত ২১, সাকিব ৮, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, আফিফ ০, মিরাজ ১০০*, নাসুম ১৮*; চাহার ৩-০-১২-০, সিরাজ ১০-০-৭৩-২, শার্দুল ১০-১-৪৭-০, উমরান ১০-০-৫৮-২, ওয়াশিংটন ১০-০-৩৭-৩, আকসার ৭-০-৪০-০)।
ভারত : ৫০ ওভারে ২৬৬/৯ (কোহলি ৫, শিখর ধাওয়ান ৮, শ্রেয়াস আইয়ার ৮২, লোকেশ রাহুল ১৪, সুন্দর ১১, রোহিত ৫১, অক্ষর ৫৬ , শার্দুল ৭, সিরাজ ২; মিরাজ , এবাদত ১০-০-৪৫-৩, মুস্তাফিজ , সাকিব ১০-১-৩৯-২, নাসুম ১০-০-৫৪-০, মাহমুদউল্লাহ ৩.৫-০-৩৩-১ )।
ফল : ৫ রানে জয়ী বাংলাদেশ।