ব্যাটিং ব্যর্থতার ম্যাচে বাংলাদেশকে জেতালেন মিরাজ
লম্বা সময় পর ওয়ানডেতে ফেরা। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত। স্বাভাবিকভাবে ফেভারিটের তকমা নিয়েই মাঠে নামে অতিথিরা। কিন্তু দারুণ বোলিং দিয়ে সেই ফেভারিটের তকমা ভেস্তে দেন সাকিব আল হাসান। ৫ উইকেট নিয়ে পথ দেখালেন বাংলাদেশকে। সঙ্গে চমক দেখালেন ইবাদত হোসেন। কিন্তু দুই বোলারের সাফল্য বৃথা করে দিচ্ছিলেন ব্যাটাররা। তবে শেষ রক্ষা করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান। এই দুজনের ব্যাটে চড়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ১ উইকেটের জয় পেল বাংলাদেশ।
আজ রোববার বেলা ১২টায় ভারত-বাংলাদেশ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল। টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি এবং পেসার ইবাদত হোসেনের বোলিং তোপে কুপোকাত ভারত ৪১.২ ওভারে ১৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। জবাবে ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে শেষ উইকেটে ৪১ বলে ৫১ রান করে দলকে জেতান মিরাজ-মুস্তাফিজ।
১৮৬ রানের জবাবে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দীপক চাহারের প্রথম বলেই রোহিম শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর ৯.১ ওভারে দলীয় ২৬ রানে এনামুল হক বিজয়কে হারায় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সিরাজের বলে সুন্দারের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন বিজয়।
জোড়া উইকেট হারানোর পরে ৬১ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন সাকিব-লিটন। ৬৩ বলে ৪১ রান করা লিটন দাসকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন ডানহাতি অফব্রেক বোলার ওয়াশিংটন সুন্দার। এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে সাবধানে আগাচ্ছিলেন সাকিব। গড়েন ২৫ বলে ২১ রানের জুটি। দলীয় ৯৫ রানে সুন্দারের বলে সাকিব আউট হলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
তবে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটিতে স্বস্তিতে ফেরে বাংলাদেশ। রান তোলার গতি ধীর হলেও এই জুটি থেকে এসেছিল গুরুত্বপূর্ণ ৩৩ রান। এই ৩৩ রান করতে দুজনের খরচ হয়েছে ৬৯ বল। দলীয় ১২৮ রানে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন শার্দুল ঠাকুর। মাহমুদউল্লাহ রিভিউ নিলেও সে যাত্রায় রক্ষা হয়নি। ১২৮ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে পুরোনো চাপ ফিরে আসে।
৩৬তম ওভারের প্রথমেই মুশফিককে বোল্ড করেন মোহাম্মদ সিরাজ। তাতে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানো আরও কঠিন মনে হতে থাকে। বাংলাদেশ জয় থেকে তখন মাত্র ৫৯ রান দূরে ছিল। ৪ উইকেট ছিল হাতে। আর বল বাকি ছিল ৮৩টি।
৩৮.২ ওভারে দলীয় ১৩৪ রানে কুলদীপ সেন আউট করেন আফিফকে। বিপদের সময়ে নিজের স্ট্যাম্প নিজেই ভেঙে আউট হন ইবাদত। ১৩৬ রানে আউট হন হাসান মাহমুদ। হাসানকে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ। শেষ উইকেটে ব্যাট হাতে কিছুটা চাপ সামলানোর চেষ্টা করেছিলেন মিরাজ। তাঁকেই সঙ্গ দিলেন মুস্তাফিজ। তাতে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে বাংলাদেশ।
এদিন প্রথম ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে বল হাতে আসেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ওপেনার রোহিত শর্মা-শিখর ধাওয়ানকে সে ওভারে মাত্র ১ রান দেন মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় ওভারে হাসান মাহমুদ দেন ৫ রান। প্রথম উইকেটের দেখা মিলে ৬ষ্ঠ ওভারে। মিরাজের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে ১৭ বলে ৭ রান করে ফেরেন ধাওয়ান।
এরপরে রোহিত-বিরাট মিলে গড়েন ২৫ রানের জুটি। তাদের দুজনকেই ফেরান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নিজের প্রথম এবং দলের ১১তম ওভারে এসেই মাত্র ১ রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নেন সাকিব। ১০.২ ওভারে ২৭ রানে ব্যাট করা রোহিতকে বোল্ড করেন সাকিব। দুবল পরেই লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৫ বলে ৯ রানে ব্যাট করা বিরাট কোহলি ফিরলে চাপে পড়ে ভারত।
চাপ থেকে দলকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন লোকেশ রাহুল। লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস আয়ারের জুটিতে ৫৬ বলে ৪৩ রান আসে। দলীয় ৯২ রানে এবাদত হোসেনের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শ্রেয়াস। পরে ওয়াশিংটন সুন্দারকে নিয়ে রাহুল গড়েন ৬০ রানের জুটি। ইনিংসের সর্বোচ্চ এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। ৪৩ বলে ১৯ রান করা সুন্দার ক্যাচ দেন ইবাদতের হাতে।
দলের রান তখন ৩৩ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫২। এর পরের ওভারে এসে আবার উইকেট পায় বাংলাদেশ। ৩৩.২ ওভারে ইবাদত এবার আউট করেন শাহবাজকে। ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল ভারত।
৩৫তম ওভারে ফের সাকিব দেখিয়েছিলেন ভেলকি। সাকিব ভেলকিতে ওই ওভারেই আউট হন শার্দুল ঠাকুর এবং দিপক চাহার। ১৫৮ রানে ৮ উইকেটের ইনিংস তারপরও টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন লোকেশ রাহুল।
রাহুল এবার সিরাজকে নিয়ে আরেকটি উইকেট গড়ার চেষ্টা করেন। তবে ৩৯.৪ ওভারে এবাদত আউট করেন রাহুলকে। যতটুকু আশা ছিল ভারতের সেটাও গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন ইবাদত। পরের উইকেটটিও নিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪১.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ভারত করে ১৮৬ রান।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৩ বল থেকে ৭০ রান করেন লোকেশ রাহুল। ৭০ রানের ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কার মার। বাংলাদেশের হয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব, ৪টি নেন এবাদত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৪১.২ ওভারে ১৮৬/১০ (রোহিত ২৭, ধাওয়ান ৭, কোহলি ৯, শ্রেয়াস ২৪, রাহুল ৭৩, ওয়াশিংটন ১৯, শাহবাজ ০, শার্দুল ২, চাহার ০, সিরাজ ৯, কুলদিপ ২*; মুস্তাফিজ ৭-১-১০-০, হাসান ৭-১-৪০-০, মিরাজ ৯-১-৪৩-১, সাকিব ১০-২-৩৬-৫, ইবাদত ৮.৪-০-৪৭-৪)।
বাংলাদেশ : ৪৬ ওভারে ১৮৭/৯ (শান্ত ০, এনামুল ১৪, লিটন ৪১, সাকিব ২৯, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ১৪, আফিফ ৬, মিরাজ ৩৮*, মুস্তাফিজ ১০* ; চাহার ৮-১-৩২-১ , শাহবাজ ৯-০-৩৯-০, সিরাজ ১০-১-৩২-৩ , শার্দুল ৯-১-২১-১)।
ফল : ১ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।