ব্রাজিলকে হারিয়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন মরক্কোর ফুটবলাররা
কাতার বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতো কেটেছে মরক্কোর। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠে বিশ্বফুটবলে নিজেদের শক্তিমত্তার জানানটা বেশ ভালোভাবেই দিয়েছিল আশরাফ হাকিমির দল। বিশ্বকাপে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে হারের লজ্জা দিয়েছে মরক্কো।
গতকাল শনিবার (২৫ মার্চ) দিনগত রাতে তাঞ্জিয়ারে ইবনে বতুতা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে আতিথ্য দেয় মরক্কো। যেখানে ২-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। এমন জয়ের পরই মুসলিমদের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সিজদায় লুটিয়ে পড়েন মরক্কোর ফুটবলাররা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সিজদার ছবিগুলো। বিশ্ব গণমাধ্যমে বেশ ভালো স্থান করে নিয়েছে হামিদ আর জাকারিয়াদের গোল উদযাপন।
প্রীতি ম্যাচ হলেও, পূর্ণশক্তির দল নিয়েই মাঠে নামে মরক্কো। ম্যাচের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণে ব্রাজিল রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রাখে এটলাস লায়ন্সরা। ম্যাচের দশম মিনিটে সুফিয়ান বৌফালের বাড়ানো বলে হাকিম জিয়াচের বাঁ পায়ের জোরালো শট ঠেকিয়ে দেয় ব্রাজিলের রক্ষণভাগ। ম্যাচের ১৩তম মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল।
তবে লুকাস পাকেতার বাড়ানো বলে নবাগত রনির ডান পায়ের শট বারের ওপর দিয়ে চলে গেলে গোল বঞ্চিত হয় ব্রাজিল। এরপর ম্যাচের ২৪তম মিনিটে ফের একবার রনির শট ঠেকিয়ে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনো। একই মিনিটে আন্দ্রে সান্তোসের ডান পায়ের শট রুখে দিয়ে জাল অক্ষত রাখেন বুনো।
তবে প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় চমক দেয় মরক্কো। ব্রাজিল না পারলেও ম্যাচের ২৯ তম মিনিটে গোল করে বসে স্বাগতিকরা। বিলাল আল খানাউসের বাড়ানো বলে ডি বক্সের মাঝামাঝি অবস্থান থেকে বৌফালের জোরালো শট জালে জড়ালে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় মরক্কো।
এরপর ম্যাচের ৩৫তম মিনিটেও ভালো সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। তবে রনির অ্যাসিস্ট করা বলে রদ্রিগোর ডান পায়ের শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। এরপর বাকি সময়ে আর তেমন কোনো জোরালো আক্রমণ করতে না পারায় ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় মরক্কো। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে ব্রাজিল। ম্যাচের ৪৮ তম মিনিটে রদ্রিগের শট ঠেকিয়ে দেয় মরক্কোর রক্ষণভাগ। ৫৪তম মিনিটে ফের একবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো।
তবে ব্রাজিল রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় সেলেসাওরা। এরপর ম্যাচের ৫৬তম মিনিটে কাসেমিরোর ক্রস থেকে ডি বক্সের বাইরে থেকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট রুখে দেয় মরক্কো। তবে ব্রাজিলকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেনি মরক্কোর রক্ষণভাগ। ম্যাচের ৬৭তম মিনিটে সমতায় ফেরে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। লুকাস পাকেতার বাড়ানো বলে কাসেমিরোর ডান পায়ের শট জালে জড়ালে ১-১ গোলে সমতায় ফেরে সেলেসাওরা।
তবে ব্রাজিলকে খুব বেশিক্ষণ স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি মরক্কোও। ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে ব্যবধান ২-১ করে আবদেল হামিদ সাবেরি। ডি বক্সের মাঝামাঝি অবস্থান থেকে তার ডান পায়ের শট জালে জড়ালে হতাশ হতে হয় সেলেসাওদের। এরপর ম্যাচের বাকি সময়ে আর তেমন কোনো জোরালো আক্রমণ করতে না পারায় ২-১ গোলে হারের লজ্জা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাজিলকে।
বিশ্ব ফুটবলের প্রথাগত বড় শক্তি নয় মরক্কো। তবে গত বিশ্বকাপ তারা ছিল আলোচিত এক দল। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে তারা জায়গা করে নেয় সেমি-ফাইনালে। শুধু ফলাফলেই নয়, দারুণ আগ্রাসী ও উজ্জীবিত ফুটবল খেলে দলটি নজর কাড়ে দারুণভাবে। আরও একবার তারই প্রমাণ পেল ফুটবল বিশ্ব।