মালানের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সর্বনাশ
নিজেদের কন্ডিশনের সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। শেরেবাংলার রহস্যময় উইকেটে অল্প পুঁজি নিয়ে ইংল্যান্ডকে আটকাতে পারেনি তামিম ইকবালের দল। বরং সাকিব-তাইজুলের স্পিনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মন্থর উইকেটে রাজত্ব করলেন ডেভিড মালান। ইংলিশ তারকার ব্যাটিং দৃঢ়তায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে জয় তুলে নিয়েছে জস বাটলারের দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এই হারে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ। একই সঙ্গে হার দিয়ে শুরু হলো কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের নতুন অধ্যায়।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৭.২ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১০ উইকেটে ২০৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছেন শান্ত।
রান তাড়ায় নেমে ইংলিশরা জয় তুলে নিয়েছে ৪৮.৪ ওভারে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১৪ রান করেন ডেভিড মালান। ১৪৫ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায়।
অল্প রানের জবাবে নেমে শুরুতেই হোচট খায় ইংল্যান্ড। প্রথম ওভারেই হারায় ওপেনার জেসন রয়কে। সাকিবের করা ওই ওভারের শেষ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডঅনে ক্যাচ দেন রয় (৪)। ছুটে এসে ক্যাচ লুফে নেন তামিম।
থিতু হওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হন ফিল সল্টও। তিনিও পড়েন স্পিনের ফাঁদে। এবারের নায়ক তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশি স্পিনারের বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প হন সল্ট। ১৯ বলে ১২ রানে থামে সল্টের ইনিংস। চারে নামা জেমস ভিন্সকেও(৬) বিদায় করেন তাইজুল।
ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ। ভয়ংকর হওয়ার আগেই থামান বাটলারকে। ডানহাতি পেসারের ডেলিভারিটি পয়েন্ট দিয়ে খেলতে গিয়ে স্লিপে শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দেন বাটলার।
৬৫ রানে ৪ উইকেট নেবার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আসে বাংলাদেশের দিকেই। তবে উইকেটে থাকা ডেভিড মালান হতাশা বাড়ান বাংলাদেশের। প্রথমে উইল জ্যাকস এরপর মঈন আলিকে নিয়ে ইংল্যান্ডকে পথ দেখান মালান। তাঁর ব্যাটে চড়ে ম্যাচে ফেরে ইংল্যান্ড। ম্যাচের বাকি সময় বাংলাদেশের হতাশার কারণ ছিলেন মালানই। উইকেটে থিতু হয়ে ১৩৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। এরপর শেষ পর্যন্ত ১১৪ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই ইংলিশ তারকা।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড়ো শুরুর আভাস দেন তামিম। তাঁর সঙ্গে থাকা লিটন ইংলিশ বোলারদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই ফেরেন তিনি।
ক্রিস ওকসের ওই ওভারের চতুর্থ বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান লিটন। পরের বলেই হয়ে যান আউট। ইংলিশ তারকার লেন্থ বলটি ডিফেন্স করতে যান তিনি। তবে সুইং করে বল গিয়ে আঘাত হানে পেছনের পায়ে। এলবির ফাঁদে পড়ে ৭ রানে বিদায় নেন ডানহাতি ওপেনার।
লিটনের ফেরার পর তামিমের স্টাম্প ভাঙেন মার্ক উড। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে উডের ১৪৭ কিলোমিটার গতির বলে এলোমেলো হয়ে যায় তামিমের স্টাম্প। ৪ বাউন্ডারিতে ৩২ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রথম ১০ ওভারে দুই উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৫৪ রান তোলে বাংলাদেশ।
দুই উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। বিপিএল জুড়ে রান করা শান্ত নিজের ফর্ম ধরে রাখেন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও। তবে বেশ মন্থর গতিতে ছুটতে থাকেন। ৬৭ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই শান্তর প্রথম হাফসেঞ্চুরি।
তবে হাফসেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি শান্ত। ব্যক্তিগত ৫৮ রানে ভাঙে তাঁর প্রতিরোধ। আদিল রশিদের গুগলি লেগ সাইড দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। শান্তর আগে মুশফিক ও সাকিবও ফিরে যান দ্রুত। ১৬ রানে মুশফিককেও নিজের শিকার বানান রশিদ। সাকিব পড়েন মঈন আলির ফাঁদে।
মাঝপথে ইনিংস বড় করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন মাহমুদউল্লাহ। ৪৮ বলে ৩১ রান করে বিদায় নেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মূল ব্যাটাররা ফেরার পর শেষ পর্যন্ত টেনেটুনে ২০৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৭.২ ওভারে ২০৯ (তামিম ২৩, লিটন ৭, মুশফিক ১৬, শান্ত ৫৮, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ৩১, আফিফ ৯, মিরাজ ৭, তাসকিন ১৪, তাইজুল ১০, মুস্তাফিজ ০; উড ৮-০-৩৪-২, ওকস ৮-০-২৮-১, আর্চার ১০-০-৩৭-২, মঈন ৭.২-০-৩৫-২, উইল জ্যাকস ৫-০-১৮-১)।
ইংল্যান্ড : ৪৮.৪ ওভারে ২১২/৭ (জেসন রয় ৪, ফিল সল্ট ১২, মালান ১১৪*, ভিন্স ৬, বাটলার ৯, জ্যাকস ২৬, মইন আলি ১৪, ওকস ৭, রশিদ ১৭*; তাসকিন ৯-১-২৬-১, সাকিব ১০-০-৪৫-১, তাইজুল ১০-০-৫৪-৩, মিরাজ ১০-২-৩৫-২, মুস্তাফিজ ৮-০-৪২-০)।
ফল : ৩ উইকেটে জয়ী ইংল্যান্ড।
সিরিজ : ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ইংল্যান্ড।