মেসিময় রাতে বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা
গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট। ৪ বছর পর আরেকটি ফাইনালে ওঠার হাতছানি ছিল ক্রোয়েশিয়ার সামনে। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি আর্জেন্টিনা। পূরণ হতে দেননি লিওনেল মেসি। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নিজে গোল করলেন, সতীর্থ জুলিয়েন আলভারেজকে দিয়ে গোল করালেন। মেসিময় রাতে ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রাখল আর্জেন্টিনা।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে লিওনেল স্কালোনির দল। দলের জয়ে গোল করেছেন লিওনেল মেসি ও জুলিয়েন আলভারেজ।
শেষ ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা। সেবার অবশ্য ট্রফি ছোঁয়া হয়নি। জার্মানির কাছে হেরে ভেঙে যায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন। ৮ বছর বাদে আরেকবার ট্রফি ছোঁয়ার মহারণে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচের পুরো সময় বল দখলে এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। পুরো ম্যাচে ৩৯ ভাগ সময় দখলে রেখে ৯বার আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। যার মধ্যে ৭টি অনটার্গেট শট। বিপরীতে ৬১ভাগ সময় বল পায়ে রাখা ক্রোয়েশিয়া আক্রমণ করে ১২ বার। কিন্তু একটিও সফল হয়নি।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের শুরু থেকে ধীরে এগোতে থাকে দুই দল। ৪-৪-২ ফর্মেশনে আর্জেন্টিনা এবং ৪-১-২-৩ ফর্মেশনে ক্রোয়েশিয়া রণকৌশল সাজায়। মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ছোট ছোট পাসে আক্রমণ শানাতে থাকে উভয় দল। ২৪ মিনিটে আর্জেন্টাইন তারকা ফার্নান্দেজের শট রুখে দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ।
ম্যাচের ৩০ তম মিনিটে ক্রোয়াট ফরোয়ার্ড ইভান পেরিসিচের শট বারপোস্ট ঘেঁষে যায়। প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম আক্রমণ এটিই।
৩১ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ওয়ান টু ওয়ানে আলভারেজকে ফাউল করেন গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। তিনি দেখেন হলুদ কার্ড। পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
পেনাল্টি থেকে এবার আর গোল করতে ভুল করেননি মেসি। এই গোলে বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান মেসি। বিশ্ব আসরে মেসির গোলসংখ্যা এখন ১১টি। আর চলটি বিশ্বকাপে পাঁচটি। গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে আগে থেকে শীর্ষে থাকা কিলিয়ান এমবাপের পাশে বসলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
গোল পেয়ে আক্রমণের গতি বাড়ায় আলবিসেলেস্তেরা। ৩৮ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে দ্বিতীয় গোল পায় তারা। দ্বিতীয় গোলের নায়ক আলভারেজ। ৪২ মিনিটে কর্ণার থেকে মাথা ছোঁয়ান আলভারেজ৷ সেই যাত্রায় রক্ষা করেন লিভাকোভিচ। ক্রোয়েশিয়া চেষ্টা করলেও শোধ করতে পারেনি গোল। আলভারেজ ঠিকই ঠাণ্ডা মাথায় ডান পায়ের শটে ঠিকানা খুঁজে নেন। তাতে উচ্ছ্বাস নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করে আর্জেন্টিনা।
বিরতি থেকে ফিরে ফের গোলের খাতায় আলভারেজের নাম। এবার অবশ্য মূল নায়ক মেসি। ৬৯তম মিনিটে নিজের দৃঢ়তায় গোলমুখে বল বাড়িয়ে দেন মেসি। সতীর্থের পাস পেয়ে গোল আদায় করে নিতে ভুল করেননি আলভারেজ। ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি।
তিন গোলে পিছিয়ে পড়ে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ফলে ৩-০ ব্যবধান রেখেই শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়ে লিওনেল স্কালোনির দল।
তৃতীয় বিশ্বকাপের স্বপ্নে বিভোর থাকা আর্জেন্টিনার সামনে আর মাত্র একটি ম্যাচ। এই ম্যাচ জিতলেই মিলবে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। এই আরাধ্যের শিরোপার জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর ফাইনালে মাঠে নামবেন লিওনেল মেসিরা। ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ঠিক হবে আগামীকাল। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরক্কো ও ফ্রান্সের মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে ফাইনালে লড়বে আর্জেন্টিনা।