মেসির আরেকটি মাইলফলকের রাতে আর্জেন্টিনার বড় জয়
কুরাসাওয়ের সঙ্গে আর্জেন্টিনা জিতবে, ব্যাপারটা প্রত্যাশিতই ছিল। আর্জেন্টিনার জয়ের চেয়ে ভক্ত-সমর্থকরা বেশি অপেক্ষায় ছিল লিওনেল মেসির আরেকটি মাইলফলকের সাক্ষী হতে। আর্জেন্টিনার জয় ও মেসির মাইলফলক–দুটোই পেয়েছে তারা। দেশের জার্সিতে মেসির নবম হ্যাটট্টিকে কুরাসাওকে ৭-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
আজ বুধবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায় স্তাদিও ইউনিকো মাদ্রে দে সিয়ুদাদসে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ কুরাসাওকে চিনতো এমন মানুষ ছিল কমই। মেসিদের জয় নিয়ে তাই কারও ভাবনা ছিল না। বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ দেশের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আর্জেন্টিনায় দুটো প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে আকাশি-নীলরা। এর মধ্যে শেষ ম্যাচে কুরাসাওয়ের বিপক্ষে আজ খেলতে নামে তারা।
ম্যাচের মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই সহজ সুযোগ মিস করেন লাউতারো মার্টিনেজ। ১০ মিনিটে মেসির শট বাঁচিয়ে দেন কুরাসাওয়ের গোলরক্ষক। ১২ মিনিটে আবারও মার্টিনেজের শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। বেশিক্ষণ অবশ্য গোলবিহীন রাখেননি মেসি। ম্যাচের বয়স তখন ২০ মিনিট, লো সেলসোর বাড়ানো বল খুঁজে নেয় মেসিকে। লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি ক্ষুদে জাদুকর। ডি-বক্সে দুজনকে কাটিয়ে ডান পায়ে চমৎকার এক গোল করেন মেসি। এক গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা, মেসি ছুঁয়ে ফেলেন মাইলফলক। প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সিতে শততম আন্তর্জাতিক গোল করলেন তিনি। স্তাদিও ইউনিকো যেন ফেটে পড়তে চাইছিল এমন উপলক্ষে। সেটিকে রাঙিয়ে দিতে ২৩ মিনিটে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোল করেন নিকোলাস গঞ্জালেস।
পানামা ও কুরাসাওয়ের সঙ্গে ম্যাচ দুটো আর্জেন্টিনার দর্শকদের জন্য উৎসবের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। উৎসবের জন্য মেসি মাঠে থাকাটাই যথেষ্ট। আর জাদুকর জানেন, কীভাবে আনন্দ বাড়িয়ে দিতে হয়। ম্যাচের ৩৩ থেকে ৩৭, এই ৫ মিনিট পুরো মেসিময়। ৩৩ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন, এক মিনিট পর গোল করালেন এনজো ফার্নান্দেজকে দিয়ে। ৩৭ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বল টেনে এনে মেসি পূর্ণ করলেন নিজের হ্যাটট্টিক।
প্রথমার্ধে ৫ গোলে এগিয়ে যাওয়া, মেসির মাইলফলক ও হ্যাটট্টিকের সুখস্মৃতি নিয়ে বিরতিতে যাওয়া ভক্তদের তখনও প্রাপ্তির ষোলোকলা পূরণ হওয়া বাকি।
বিরতি থেকে ফিরে তাৎক্ষণিক গোল না পেলেও মুগ্ধতায় মোড়ানো আর্জেন্টিনার নান্দনিক ফুটবল প্রদর্শনী চলছিলই। ৭৮ মিনিটে আবারও গোলের স্বাদ দিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। আকাশি-নীলদের ফাইনালের মহাতারকা ডি মারিয়ার গোলে আরও একবার উৎসবের আবহ ফিরে আসে স্টেডিয়ামজুড়ে। ৮৭ মিনিটে নীল-আকাশিদের উল্লাসের শেষ ফানুস ওড়ান গঞ্জালো মন্টিয়েল।
পুরো ম্যাচে ২৭ বার প্রতিপক্ষের জাল লক্ষ্য করে শট করেছে আর্জেন্টিনা। লক্ষ্য বরাবর গিয়েছে ১৭টি শট। কুরাসাও সেখানে ছয়বার শট নিলেও লক্ষ্য বরবার ছিল না একটিও। আর্জেন্টিনার গোল আরও বেশি হতে পারতো। কিন্তু গোল করার চেয়ে খেলা উপভোগেই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন মেসিরা। মেসি-ডি মারিয়াদের সময়টাই এখন এমন, জয়ের চেয়ে দর্শকদের সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াটাই যাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।