মেসির দুঃখ ঘুচল অবশেষে
রেফারি যখন শেষ বাঁশি বাজান, তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন আর্জেন্টাইনরা। মাঠে বসে পড়েন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তাঁর চোখ জুড়ে নেমে আসে কান্নার জোয়ার। তবে এই কান্না হতাশার নয়, প্রাপ্তির, ফুটবলে পূর্ণতার। এত বছর ধরে যে স্বপ্ন লালন করে যাচ্ছিলেন মেসি, এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি। কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে পুরো ক্যারিয়ারের দুঃখ ঘুচালেন রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো শিরোপা নেই যা জেতেননি মেসি। লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ, কোপা দেলরে, ছয় ব্যালন ডি’অর, রেকর্ড ছয়বারের বিশ্বসেরা ফুটবলার—কী নেই তাঁর ঝুলিতে। জাতীয় দলের হয়েও ব্যক্তিগত অর্জনের শেষ নেই। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও মেসি ছিলেন অপূর্ণ। কারণ, এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এতদিন আর্জেন্টিনাকে কোনো মেজর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ট্রফি উপহার দিতে পারেননি মেসি।
চারবার বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে তুলে ব্যর্থ হয়েছেন শিরোপা জেতাতে। একটি ছিল ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে, বাকি তিনটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে। তাই, দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া ছিলেন মেসি।
টুর্নামেন্ট চলার মাঝপথেও জানিয়েছেন, কোনো ব্যক্তিগত অর্জনের কথা মোটেই ভাবছেন না তিনি। কোপায় এসেছেন সবার স্বপ্ন পূরণ করতে। এসেছেন শিরোপা জেতাতে। অবশেষে নিজের লক্ষ্যে সফল মেসি। ২৮ বছর পর তাঁর নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা।
আজ রোববার কোপার ফাইনালে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে মুকুট পরেছেন মেসিরা। অবশ্য দলের ট্রফি জয়ের দিনে খুব বড় ভূমিকা রাখতে পারেননি মেসি। অধিনায়কের আক্ষেপ ঘুচানোর কাজটি করেছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।
ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া গোলটি করেছেন ডি মারিয়া। ২০০৪ সালে সিজার দেলগাদোর পর প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে কোপার ফাইনালে গোল করলেন ডি মারিয়া।
যে মাঠে বারবার ট্র্যাজেডির শিকার হয়েছেন মেসি, সেই ঐতিহাসিক মারাকানাই আজ হাসি ফোটালো মেসির মুখে।
এবার মারাকানা হতাশ করেছে নেইমারদের। গতবার মুকুট পরা ব্রাজিল এবার মাঠ ছেড়েছে শূন্য হাতে। দেশের মাটিতে তাদের পরাজয় ছিল বহু পুরোনো। সেই ১৯৭৫ সালে পেরুর বিপক্ষে শেষ হেরেছিল ব্রাজিল। এমনকী ব্রাজিলের মাটি থেকে কোপা আমেরিকার ফাইনাল কেউ জিততে পারেনি। সে সবই এবার হলো। আগের পাঁচ ফাইনালের প্রতিটিতেই জিতেছিল স্বাগতিকেরা। এবার সব ইতিহাস পাল্টে দিয়ে ব্রাজিলের মাঠ থেকে কোপার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিয়ে ফিরল লিওনেল স্কালোনির দল।