রেকর্ডের মালা গেঁথে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচেও পাল্টায়নি প্রেক্ষাপট। সাগরিকায় ব্যাট হাতে রীতিমতো ঝড় তুললেন লিটন-রনিরা। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে আধিপত্য দেখালেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। একাই তুলে নিলেন ৫ উইকেট। একম্যাচে রেকর্ডের মালা গেঁথে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৭৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ পকেটে পুরল সাকিব আল হাসানের দল।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের রানের হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এটি। এ ছাড়াও লিটন গড়েছেন দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড, সাকিব গড়েছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড, হয়েছে ওপেনিং জুটির রেকর্ড—এমন একাধিক রেকর্ডময় ম্যাচে বাংলাদেশ হাসল জয়ের হাসি।
আজ বুধবার (২৯ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও লিটন দাসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর সাকিব-তাওহিদের দৃঢ়তায় ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২০২ রান তোলে স্বাগতিক বাংলাদেশ।
জবাব দিতে নেমে ১২৫ রানে থামে আয়ারল্যান্ড। বৃষ্টিতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে খেলা হয় ১৭ ওভারের। তাতে ২০৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য পাড়ি দেওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল আইরিশদের জন্য।
এই কঠিন লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম বলেই হারায় অধিনায়ক পল স্টার্লিংকে। তাসকিন আহমেদের করা ইনিংসের প্রথম বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন স্টার্লিং।
দ্বিতীয় ওভারে সাকিব এসেও তুলে নেন উইকেট। নিজের প্রথম ওভারে সাকিব নেন ট্যাকারের উইকেট। দলীয় ৭ রানে জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আয়ারল্যান্ড।
সেই চাপ সামলে ওঠার সুযোগই দেনই সাকিব। বোলিংয়ে পরের সময়জুড়ে চলে সাকিব ম্যাজিক। একাই নিজের ঝুলিতে পুরেন ৫টি উইকেট। যার মাধ্যমে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের দিনে ব্যাট হাতে আর দাঁড়াতেই পারেনি আয়ারল্যান্ড। ১২৫ রানেই থেমে যায় আইরিশদের ইনিংস।
বল হাতে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৫টি উইকেট নেন সাকিব। এ ছাড়া ২৭রান খরচায় তাসকিন নেন ৩টি উইকেট।
এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসে ব্যাট হাতে যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন রনি-লিটন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ১৭ ওভারের ম্যাচে পাওয়ার প্লের প্রথম ৫ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৭৩ রান তুলে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশ।
মাত্র ১৮ বলে পঞ্চাশ তুলে নেন ওপেনার লিটন দাস। ছাপিয়ে যান আশরাফুলের ১৬ বছর আগের দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড। বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে এতটাই ভালো খেলেছে যে প্রথম ৯ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১২৩ রান তুলে ফেলে। কোনোভাবেই লিটন-রনির প্রতিরোধ ভাঙতে পারছিল না আইরিশ বোলাররা।
তবে শেষমেষ দলীয় ১২৪ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন রনি। বেঞ্জামিন হোয়াইটের বলে লং অনে মারতে গিয়ে মার্ক অ্যাডায়ারের হাতে ধরা পড়েন ডানহাতি এ ব্যাটার। আউট হওয়ার আগে ২৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন রনি। তাঁর বিদায়ের পর সাকিবকে নিয়ে জুটি গড়েন লিটন। যদিও তা খুব বেশি বড় হয়নি। দলীয় ১৩৮ রানে বেঞ্জামিন হোয়াইটের বলে উইকেটের পেছনে ট্রাকারে হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ফেরার আগে ৪১ বলে ক্যারিয়ারসেরা ৮৩ রানের ইনিংস খেলে যান ডানহাতি এ ওপেনার। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল পাঁচটি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কা।
লিটনের বিদায়ের পর তাওহিদকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন অধিনায়ক সাকিব। শেষদিকে সাকিব-তাওহিদ জুটিতে ২০২ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন বেঞ্জামিন হোয়াইট। অ্যাডায়ার নেন এক উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৭ ওভারে ২০২/৩ (লিটন ৮৩, রনি ৪৪, সাকিব ৩৮*, তাওহিদ ২৪, শান্ত ২* ; ডেলানি ২-০-২৪-০, অ্যাডায়ার ৪-০-৫২-১, হিউম ৩-০-৪৯-০, হ্যান্ড ১-০-১৯-০, হোয়াইট ৪-০-২৮-২, ট্যাক্টর ২-০-১৭-০, ক্যাম্ফার ১-০-১০-০)।
আয়ারল্যান্ড : ১৭ ওভারে ১২৫/৯ (পল স্টার্লিং ০, রস ৬, ট্যাকার ৫, ট্যাক্টর ২২, ডেলানি ৬, ডকরেল ২, ক্যাম্ফার ৫০, অ্যাডায়ার ৬, হ্যান্ড ২, হিউম ২০, হোয়াইট ২; তাসকিন ৪-০-২৭-৩, সাকিব ৪-০-২২-৫, নাসুম ৩-০-৩৭-০, মিরাজ ১-০-৯-০, হাসান ২-০-৬-১, মুস্তাফিজ ৩-০-২১-০ )।
ফল : ৭৭ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ : ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।