লিভারপুলের স্বপ্ন মাড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ
আক্রমণাত্মক ফুটবলে সুযোগ এসেছিল বারবার। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার থিবো কোর্তোয়ার দারুণ সব সেভের সামনে ব্যর্থ হয়ে যায় লিভারপুলের সব চেষ্টা। উল্টো বিরতির পর গোল খেয়ে বসে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ভাগ্য গড়ে দেওয়া গোলেই ফের ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপসেরার মুকুট জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া গোলটি দ্বিতীয়ার্ধে করেছেন ব্রাজিল তারকা ভিনিসিয়ুস।
এই প্রতিযোগিতায় আগে থেকেই রেকর্ড শিরোপা জয়ী দল রিয়াল মাদ্রিদ। আগের ১৬ বারের ফাইনালে ১৩বারই শিরোপা জিতেছিল তারা। নিজেদের ১৭তম ফাইনালে সেই সংখ্যাটাকে ১৪তে নিয়ে গেল স্প্যানিশ ক্লাবটি।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচটি মাঠে গড়াতে কিছুটা বিলম্ব হয়। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩৬ মিনিট অপেক্ষার পর অবশেষে ম্যাচ গড়ায়। প্রথমার্ধ পুরোটা জুড়েই ছিল লিভারপুলের আধিপত্য।
এই অর্ধে ৫২ শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রেখে ১০বার রিয়াল শিবিরে আক্রমণ করে লিভারপুল। যার মধ্যে ৫টিই ছিল অনটার্গেট শট। কিন্তু বারবারই ফিনিশিংয়ে গিয়ে ব্যর্থ হতে হয়েছে লিভারপুলকে।
এই ক্ষেত্রে গোলকিপারকে থিবো কোর্তোয়াকে ধন্যবাদ দিতে পারে রিয়াল। কারণ বেশ কয়েকবার কোর্তোয়ার কারণেই লিভারপুলের আক্রমণ থেকে বেঁচে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
ম্যাচের ১৬ মিনিটেই বড় সুযোগ পায় লিভারপুল। ছয় গজ বক্সে জটলার মধ্যে থেকে নেওয়া মোহাম্মদ সালাহর শট লক্ষ্যের দিকেই যায়। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে রিয়ালকে বাঁচান কোর্তোয়া।
পর মুহূর্তেই আসে আরেকটি সুযোগ। এবারও সেই বাধা কোর্তোয়া। থিয়াগো আলকান্তারার নেওয়া শটে বল চলে যায় রিয়াল গোলকিপারের হাতে। এরপরের মিনিটে ফিরতি বলে শট নিয়ে আতঙ্ক ছড়ান সালাহ। কিন্তু সেটাও কোর্তোয়ার কাছে ভেস্তে যায়।
২১ মিনিটে লিভারপুলের হয়ে আক্রমণে যান সাদিও মানে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন মানে। কিন্তু কোর্তোয়া আর ভাগ্যের জেরে এই যাত্রাতেও বেঁচে যায় রিয়াল।
প্রথমার্ধে মাত্র একবার আক্রমণে যেতে পেরেছে রিয়াল। কিন্তু তাতে সাফল্য আসেনি। অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সেই গোল। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে জটলার মধ্যে বল পেয়ে গোল করে ফেলেন করিম বেনজেমা। তখন সঙ্গে সঙ্গে অফসাইড দেননি রেফারি। এরপর ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) সময় নিয়ে চেক সেটি অফসাইড ঘোষণা করেন। তাই গোলহীন থেকেই দুদলকে প্রথমার্ধ শেষ করতে হয়।
প্রথমার্ধ জুড়ে দাপট দেখানো লিভারপুল বিরতির পর কিছুটা ছন্দ হারায়। সেই সুযোগটাই দারুণভাবে কাজে লাগাল রিয়াল মাদ্রিদ। ৫৯ মিনিটে বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ঢুকে পড়েন ফেদেরিকো ভালভার্দে। এরপর বাঁ দিকে থাকা ভিনিসিউস জুনিয়রকে পাস দেন তিনি। সুযোগ হাতছাড়া করেননি ব্রাজিল তারকা। ডান পায়ের শটে কাছের পোস্ট দিয়ে বল ঠিকানায় পাঠান ভিনি। সঙ্গে সঙ্গেই উৎসবে মেতে ওঠে রিয়াল ভক্তরা।
লিড পাওয়ার পর নিজেদের রক্ষণে জোর দিয়ে খেলে রিয়াল। এর মধ্যেও বার আক্রমণে গিয়ে হতাশ হতে হয় লিভারপুলকে। পুরো ম্যাচে ২৪ বার আক্রমণ করেও রিয়ালের জালের দেখা পানি লিভারপুল। ফলে হতাশা নিয়েই শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয় ইয়ূর্গেন ক্লপের শিষ্যদের।
এর আগে ২০১৮ সালের ফাইনালেও একই হতাশার সঙ্গী হয়েছিল লিভারপুল। ওই ফাইনালে লিভারপুলকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল রিয়াল। এবারও তাই হলো। প্রিমিয়ার লিগের দলটিকে হতাশায় ডুবিয়ে ইউরোপসেরার মুকুট পরল কার্লো আনচেলত্তির দল।