শততম টি-টোয়েন্টি জয়ে রাঙাল বাংলাদেশ
লক্ষ্যটা খুব বেশি বড় নয়। জিততে বাংলাদেশের চাই ১৫৩ রান। সেই রান তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈম। ওপেনিং জুটিতে রেকর্ড গড়েন দুজন। তাতে বাংলাদেশেরও কাজটা সহজ হয়ে যায়। জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে শততম ম্যাচ জয়ে রাঙাল বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে আট উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল লাল-সবুজের দল। এটি ছিল বাংলাদেশের ১০০তম টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডে ও টেস্টের পর টি-টোয়েন্টির ১০০তম ম্যাচেও জিতল বাংলাদেশ।
ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড গড়েছেন সৌম্য ও নাঈম। দুজনে মিলে আজ গড়েন ৮০ বলে ১০১ রানের জুটি। এটিই এখন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগের রেকর্ডটিও অবশ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ছিল। গত বছর ঢাকায় এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ওপেনিংয়ে ৯২ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। আজ সেই রেকর্ড ভাঙলেন সৌম্য ও নাঈম।
রান তাড়ায় শুরুতে সাবধানী ছিলেন দুই ওপেনার। এরপর মারমুখী খেলেন নাঈম। কিছুটা ধীরে ছিলেন সৌম্য। এর মধ্যে ৪৫ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন সৌম্য। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরেই রান আউট হয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
১৩.২ ওভারে রিচার্ড এনগারাভার বল ডিপ মিডউইকেটে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু হয়নি। স্টাম্প থেকে বেশ দূরে পাওয়া থ্রো ধরে রেজিস চাকাভা রান আউট করেন সৌম্যকে।
এরপর তিনে সাকিব আল হাসানকে না নামিয়ে নেমে যান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। নাঈমকে ভালো সঙ্গ দেন তিনি। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি। তিনিও রানআউট হয়ে ফেরেন। ১২ বলে ১৫ রান করেন তিনি। এরপর নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন নাঈম। ম্যাচ শেষে ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ৫১ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ছয়টি বাউন্ডারি। সোহান অপরাজিত ছিলেন ১৬ রানে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯ ওভারে সবগুলো উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। হারারের স্পোর্টস ক্লাবে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ওভারেই স্বাগতিকদের ওপেনিং জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। ফিরিয়ে দেন ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানিকে। মুস্তাফিজের বল টেনে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে লাগান তিনি, কিন্তু টাইমিং ঠিক হয়নি। ডিপ মিডউইকেট সীমানা থেকে অনেকটা দৌঁড়ে এসে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিয়েছেন সৌম্য সরকার।
তবে শুরুর ধাক্কা সামলে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে স্বাগতিকরা। তবে সেটা বেশিদূর যেতে দেননি সাকিব আল হাসান। নবম ওভারে মাধেভেরেকে ফিরিয়ে দেন তিনি।
সাকিবের বল লং অফ দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মাধেভেরে। কিন্তু ব্যাটের ভেতরের দিকে লেগে বল ওপরে উঠে যায়। লাফিয়ে নিজের বল নিজেই ক্যাচ নেন সাকিব। ২৩ রানে ফেরেন মাধাভেরে, ভাঙেন ৬৪ রানের জুটি।
১১তম ওভারে জোড়া ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। ঝড় তোলা চাকাভা ফিরে যান রান আউট হয়ে। ২২ বলে ৪৩ করে ফেরেন তিনি। এরপর ওই ওভারেই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে ফেরান তরুণ বোলার শরিফুল ইসলাম।
এরপর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯ ওভারে ১৫২ রান করে জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ২৩ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। ৩১ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। ১৭ রান দিয়ে দুই উইকেট পেয়েছেন শরিফুল। সৌম্য পেয়েছেন একটি উইকেট।
একমাত্র টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে জয়ের স্বস্তি নিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচেও এলো জয়ের স্বস্তি। আগামীকাল শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুদল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ১৯ ওভারে ১৫২ (মাধেভেরে ২৩, মারুমানি ৭, চাকাভা ৪৩, মায়ার্স ৩৫, রাজা ০, মুসাকান্দা ৬, বার্ল ৪, জঙ্গুয়ে ১৮, মাসাকাদজা ৪*, এনগারাভা ০, মুজারাবানি ৮; সাইফ ৪-০-২৩-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-৩, সাকিব ৪-০-২৮-১, শরিফুল ৩-০-১৭-২, মেহেদি ১-০-১৮-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১৪-০, সৌম্য ২-০-১৮-১)।
বাংলাদেশ : ১৮.৫ ওভারে ১৫৬/২ (সৌম্য ৫০, নাঈম ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৫, সোহান ১৬; মুজারবানি ৩.৫-০-২২-০, রিচার্ড ৪-০-৪৬-০, মাধাভেরে ৩-০-২৪-০, সিকান্দার ২-০১৬-০, মাসাকাদজা ৩-০-২০-০)।
ফল : আট উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সৌম্য সরকার।