শেষ ওভারের নাটকে জিতল লখনৌ
নিকোলাস পুরানের প্রলয়ঙ্কারী ইনিংসের পর ম্যাচ যখন লখনৌ সুপার জায়ান্টের হাতে, শেষ ওভারে হার্শাল প্যাটেল এসে জানান দিলেন, শেষের আগে শেষ করতে দিচ্ছেন না তিনি। আগের ৩ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকা হার্শালের হাতেই বল তুলে দিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। লখনৌর তখন প্রয়োজন ৬ বলে ৫, হাতে ৩ উইকেট। সেখান থেকে ৫ বলে ২ উইকেট নিলেন হার্শাল, ১ বলে সমীকরণ ১ রান। শেষ বলে রবি বিসনয়ী ও আভেশ খান প্রান্ত বদল করলেন। এক রান এবং লখনৌর এক উইকেটে জয়।
প্রথম ম্যাচে দাপুটে জয়। দ্বিতীয় ম্যাচে লজ্জার হার। প্রথম দুই ম্যাচেই মুদ্রার দুই পিঠ দেখে ফেলা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু মাঠে নামে লখনৌ সুপার জায়ান্টের বিপক্ষে। আইপিএলে সোমবার (১০ এপ্রিল) একমাত্র ম্যাচে মুখোমুখি হয় দল দুটি। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে বেঙ্গালুরু তোলে ২১২ রান। জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে লখনৌ তুলে ফেলে প্রয়োজনীয় ২১৩ রান।
বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লখনৌ অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। রাহুলের মাথায় হয়তো ছিল আগের ম্যাচে কলকাতার বিপক্ষে ১২৩ রানে বেঙ্গালুরুর অলআউট হয়ে যাওয়া। কিন্তু এদিন অন্য রূপ দেখালো বিরাট কোহলির দল। কোহলি ও ফাফ ডু প্লেসিস মিলে ওপেনিংয়ে তোলেন ৯৬ রান। অমিত মিশ্রর বলে মার্কাস স্টয়নিসের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে কোহলি করেন ৪৪ বলে ৬১ রান। কোহলি আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৯.৫ বলে মার্ক উডের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ম্যাক্সওয়েল খেলেন ২৯ বলে ৫৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। তার ইনিংসে চারের মার ছিল ৩ টি, বিপরীতে ছক্কা ৬ টি। বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ডু প্লেসিস অপরাজিত থাকেন ৪৬ বলে ৭৯ রানে। তিন অর্ধশতকে ভর দিয়ে ২ উইকেট হারিয়ে বেঙ্গালুরু পায় ২১২ রানের বড় সংগ্রহ।
বড় রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় লখনৌ। ইনিংসের তৃতীয় বলে কাইল মায়ার্সকে বোল্ড করেন মোহাম্মদ সিরাজ। চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ওয়েইন পারনেল। তুলে নেন দীপক হুদা (৯) ও ক্রুনাল পান্ডিয়ার (০) উইকেট। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে লখনৌ ঘুরে দাঁড়ায়। মার্কাস স্টয়নিস ও লোকেশ রাহুল চতুর্থ উইকেটে করেন ৭৬ রানের জুটি। বিধ্বংসী ব্যাটিয়ে ৩০ বলে ৬৫ রান করে কর্ণ শর্মার শিকারে পরিণত হন স্টয়নিস। স্টয়নিস আউট হওয়ার পরপরই সিরাজের বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রাহুল (১৮)।
এরপর ক্রিজে এসে নিকোলাস পুরান পুরো খেলাটাকে নিজেদের দিকে টেনে নেন। ব্যাট হাতে টর্নেডো তোলেন বেঙ্গালুরুর মাঠে। মাত্র ১৯ বলে ৬২ রান করে ম্যাচটাকে নিয়ে আসেন হাতের মুঠোয়। দলীয় ১৮৯ রানে সিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে দলকে রেখে যান সুবিধাজনক স্থানে। আইপিএলে নিজের ১ হাজার রান পূর্ণ করার রাতটা নিকোলাস পুরান এরচেয়ে ভালোভাবে রাঙাতে পারতেন না। বেঙ্গালুরুর বোলারদের দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়ে ১৯ বলে ৬২ রানের প্রলয়ঙ্কারী এক ইনিংস খেললেন। ৪ চার ও ৭ ছয়ে স্ট্রাইক রেট ৩২৬.৩১!
এরপর আসে শেষ ওভারের নাটক। যা অতিক্রম করে শেষ বলে ১ উইকেটে জিতে আসরে নিজেদের তৃতীয় জয় পায় লখনৌ।
রান পাহাড়ের ম্যাচেও বেঙ্গালুরুর পক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ সিরাজ। পারনেলও পান ৩ উইকেট। শেষ ওভারে অসামান্য বোলিং করে প্যাটেল তুলে নেন ২ উইকেট। তবুও ঘরের মাঠে হারের আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বেঙ্গালুরুকে।