১৫ মাস পর টেস্টে জয়ের শুভ্রতায় ভাসল বাংলাদেশ
জয়ের সম্ভাবনা ছিল টেস্টের তৃতীয় দিনেই। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে বাংলাদেশের অপেক্ষা বাড়ায় আয়ারল্যান্ড। পুরো একদিন অপেক্ষা করিয়ে অবশেষে ধরা দিল প্রত্যাশিত জয়। চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনেই আইরিশদের প্রতিরোধ থামিয়ে একমাত্র টেস্ট নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ১৫ মাস পর টেস্টে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। সবশেষ গেল বছরের শুরুতে শুধু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। আর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটিতে ড্র করে। বাকি সবগুলোতেই হার দেখেছিল বাংলাদেশ। এতদিন পর টেস্টে জয়ের শুভ্রতায় ভাসল বাংলাদেশ।
এছাড়া যেকোনো দলের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। অবশেষে সেই হারের বৃত্তটাও ভাঙতে পেরেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে প্রথম দেখাতেই জিততে পেরেছে সাকিব আল হাসানের দল।
আজ শুক্রবার দিনের শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। চতুর্থ দিনের ৩৭ মিনিটের মধ্যেই আইরিশদের অলআউট করেন সাকিবরা। দুটি উইকেটই নেন ইবাদত হোসেন। প্রথমে আগের দিনের থিতু হয়ে যাওয়া ম্যাকব্রেইনের (৭২) প্রতিরোধ ভাঙেন ইবাদত। এরপর ফিরিয়ে দেন গ্রাহাম হিউমকে।
লেজের প্রতিরোধ ভাঙলে আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে থামে ২৯২ রানে। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮ রানের। এর জবাব দিতে নেমে মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরিতে ২৭.১ ওভারে ১৩৮ রান করে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে ৭ উইকেট হাতে রেখে জয়ের দেখা পেয়ে যায় সাকিব আল হাসানের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ বলে ৫১ রান করেন মুশফিকুর রহিম। ৬৫ বলে ৩১ রান করেন তামিম ইকবাল। মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। ওপেনিংয়ে নামা লিটন দাস আউট হন ১৯ বলে ২৩ রান করে।
আইরিশদের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনই জয় তুলে নিতে পারত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল আইরিশদের ইনিংস ব্যবধানে হারানোর। কিন্তু হ্যারি ট্যাক্টর-ট্যাকাররা মিলে সেটা হতে দেননি।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ থেকে ১২৮ রান পিছিয়ে গতকাল তৃতীয় দিন শুরু করে আয়ারল্যান্ড। তখন তাদের স্কোরবোর্ডে ছিল ২৭ রান, হাতে ছিল ৬ উইকেট। এই ছয় উইকেট নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোলে অতিথিরা। বাংলাদেশের বোলারদের পুরো দিনজুড়ে পরীক্ষা নেয় আইরিশিরা।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে উইকেটের দেখাই মিলছিল না। সাকিব ও তাইজুল প্রথম ছয় ওভার করার পর আক্রমণে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন স্পিনার মিলেও উইকেট নিতে না পারায় সাকিব বোলিংয়ে আনেন পেসার শরিফুল ইসলামকে। প্রথম ১৪ ওভারে চারজন আলাদা বোলারকে আক্রমণে আনে বাংলাদেশ। তবু উইকেট ধরা দিচ্ছিল না।
অবশেষে দিনের ৫৪তম মিনিটে এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান শরিফুল ইসলাম। আইরিশদের ইনিংসের ৩২.১ ওভারে মুরকে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান পেসার শরিফুল। দলীয় ৫১ রানে ৫ উইকেট হারায় আইরিশরা। এরপর এই সেশনে আর উইকেট যায়নি অতিথিদের। বরং আরেকটি জুটি পেয়ে যায় সফরকারীরা।
হ্যারি ট্যাক্টরের সঙ্গে এবার জুটি গড়েন ট্যাকার। দুজন মিলে ১৪৫ বল থিতু হয়ে গড়েন ৭২ রানের জুটি। লাঞ্চ বিরতির পর এই জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। ২১০ মিনিট উইকেটে থাকা ট্যাক্টরকে এলবির ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। বাংলাদেশি স্পিনারের ফুল লেংথ ডেলিভারি ট্যাক্টরের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে প্যাডে আঘাত হানে। জোরালো আবেদন উঠলে আউট দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি আইরিশ ব্যাটারের। প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করা ট্যাক্টর ১৫৯ বলে ৫৯ রান করে থামেন।
ট্যাক্টরের পর বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন ট্যাকার। ৯৪ বলে তিনি তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তৃতীয় সেশনে এসে সেঞ্চুরিও পেয়ে যান তিনি। ১৫৯ বলে আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পান টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা। শেষ পর্যন্ত ২২৬ মিনিট ধরে উইকেটে থাকা এই ট্যাকারকে থামান ইবাদত।
এরপর দিনের বাকি অংশ উইকেটে কাটিয়ে দেন ম্যাকব্রেইন ও হিউম। এই দুজনের প্রতিরোধ ভেঙে অবশেষে চতুর্থ দিন এসে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ।
এর আগে টেস্টের প্রথম দিন টস জিতে আগে ব্যাট করে ৬২.২ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২১৪ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। বিপরীতে শেষ বিকেলে খেলতে নেম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
এরপর দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে এসে প্রথম ইনিংসে ৩৬৯ রানে থামে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৬ রান করেন মুশিফকুর রহিম। স্বাগতিকদের লিড দাঁড়ায় ১৫৫ রানে। এই রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলাতেই ব্যাটিং নেমে দ্রুত ৪ উইকেট হারায় আইরিশ। এর মধ্যে সমান দুটি করে সাকিব ও তাইজুল। দুই স্পিনার মিলেই বাংলাদেশের সমীকরণ সহজ করে দেন। স্বপ্ন দেখান ইনিংস ব্যবধানে জয়ের। কিন্তু সেই সমীকরণ তৃতীয় দিন মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে চতুর্থ দিনে ধরা দিল কাঙ্ক্ষিত জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৬৯
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১২৬ ওভারে ২৯২ (কমিন্স ১, ম্যাককলাম ০, বালবার্নি ৩, টেক্টর ৫৬, ক্যাম্ফার ১, মুর ১৬, টাকার ১০৮, ম্যাকব্রাইন ৭২, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ১৪, হোয়াইট ০, সাকিব ১৩-৪-২৬-২, তাইজুল ৪২-১৬-৯০-৪, মিরাজ ৩০-৮-৫৮-০, ইবাদত ১৫-৩-৩৭-৩, শরিফুল ৮-১-৩৫-১, খালেদ ৭-২-৩৮-০, মমিনুল ১-০-২-০)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২৭.১ ওভারে ১৩৮/৩ (তামিম ৩১, লিটন ২৩, শান্ত ৪, মুশফিক ৫১, মুমিনুল ২০ ; অ্যাডায়ার ৬-০-৩০-১, ম্যাকব্রেইন ১৩.১-০-৫২-১, হোয়াইট ৭-০-৪৩-১, টেক্টর ১-০-৫-০)।
ফল : ৭ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ : ১-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।