এটি কি ষড়যন্ত্রের আলামত?
ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের হাতধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। ক্রিকেটারদের সাফল্যে দেশবাসী এখন গর্বিত। তাই ক্রিকেটারদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা যেমন বেড়েছে, তেমনি তাঁরা থাকেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও। সমর্থকদের কাছে একজন ক্রিকেটার নায়কেরই মতো।
একজন ক্রিকেটারের সান্নিধ্য পাওয়া সমর্থকদের কাছে যেন সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই। আর একে সুযোগ হিসেবেও নিচ্ছেন কেউ কেউ। যার সর্বশেষ উদাহরণ স্পিনার আরাফাত সানিকে ঘিরে এক তরুণীর কাণ্ড। আরাফাত সানির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে দাবি করে যে কাবিননামা এই তরুণী দেখিয়েছেন, অনুসন্ধানে সেটির সত্যতা মেলেনি। সেই কাজি অফিস, সেই নথির কোনো খোঁজ মেলেনি।
তবে এরই মধ্যে জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই ক্রিকেটারকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও।
কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এভাবে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটারদের নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবর্মূতি ক্ষুণ্ণ করার ‘ষড়যন্ত্র’ করতে পারে কোনো মহল।
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাই এখনই এই বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তা ছাড়া এটি আরাফাত সানির ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারপরও যে আলামতগুলোর কথা আমরা শুনেছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে এখন একটুকু বলা যায়, এটি হয়তো তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। একই সঙ্গে ক্রিকেটের জন্যও সুখকর বার্তা নয়। কারণ একজন ক্রিকেটার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্রিকেটও ক্ষতির মুখে পড়বে।’
এর জন্য ক্রিকেটাদের আরো বেশি সতর্ক হাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি, ‘এখন সময় এসেছে ক্রিকেটারদের আরো বেশি সতর্ক হওয়ার। তাহলেই এ সব সমস্যা থেকেই দূরে থাকা সম্ভব হবে।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হিরা মেনেই নিতে পারছেন না আরাফাত সানি এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা যদি ভুয়া হয়ে থাকে, তাহলে বিসিবির উচিত, এ ব্যাপারে তদন্ত করে একটা পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ আমি যতটুকু জানি, ছেলেটা খুবই শান্ত ও ভদ্র প্রকৃতির। তাঁর পক্ষে এমন কাজ করা মোটেও সম্ভব নয়।’
জাতীয় দলের সাবেক এই ম্যানেজার আরো বলেন, ‘বিভিন্ন খবরে সেই তরুণীর যে বাড়িটি আমরা দেখেছি, আরাফত সানির মতো ক্রিকেটারের সেখানে যাওয়ার কথা নয়। আমার বিশ্বাস, বিসিবি ঘটনার প্রকৃত সত্য জেনে একটা পদক্ষেপ নেবে। কারণ একজন ক্রিকেটার জাতীয় সম্পদ।’
এদিকে এনিটিভি অনলাইনের অনুসন্ধানে জানা যায়, আদালতে সেই তরুণীর দাখিল করা কাবিননামায় যে মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) অফিস ও কাজির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে কোনো কাজি অফিসই নেই। সেই ঠিকানায় আছে একটি মাংসের দোকান। এর আগেও কখনো ওই ঠিকানায় কোনো কাজি অফিস ছিল না।
‘কাবিননামায়’ কাজির নাম বলা হয়েছে আনোয়ার হোসেন। উল্লেখ করা এলাকায় সেই নামে কোনো কাজি না মিললেও পাশের খিলগাঁওয়ের এলাকায় সেই নামের একজন কাজি পাওয়া যায়। সেই কাজি আনোয়ার হোসেন (বকুল) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আরাফাত সানি নামের কেউ আমার অফিসে এসে বিয়ে করেননি। আর কাবিননামায় যে ভলিউম ও পৃষ্ঠা নম্বর রয়েছে, তার কোনোটিই সঠিক নয়। কারণ, আমার কাছে যে বই রয়েছে, তাতে এমন কোনো কিছু নেই। আর কাবিননামায় যে সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তা-ও আমার নয়।’