ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রেরণা যে জয়গুলো
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। এরপরই পর্দা উঠছে ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির। আসরের প্রথম ম্যাচেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত এই দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্য কিন্তু নজরকাড়া। দুদলের সর্বশেষ পাঁচ সাক্ষাতের তিনবারই জয়ী দলটির নাম বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত ১৮ ম্যাচের চারটিতে জিতেছে লাল-সবুজের দল, যার তিনটিই এসেছে গত দুই বছরে। আসুন, দেখে নেওয়া যাক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মহাকাব্যিক সেই চার জয়ের টুকরো অংশগুলো।
১০ জুলাই ২০১০, ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড
১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ, যার সবকটিতেই হার মানতে হয় টাইগারদের। এমনকি ক্রিকেটের কুলীন এই দেশটির বিপক্ষে বড় ধরনের প্রতিরোধও পড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রথম ওয়ানডেতেও বড় পরাজয়ের সাক্ষী হয় বাংলাদেশের। ব্রিস্টলে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে তাই বাংলাদেশের পক্ষে বাজি লাগানোর মতো মানুষ ছিল না। টস হেরে আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের সামনে ২৩৭ রানের লক্ষ্য রাখে বাংলাদেশ। টাইগারদের পক্ষে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। এ ছাড়া জহুরুল ইসলাম ৪০ ও মাহমুদউল্লাহ করেন ২৪ রান।
জবাবে দারুণ শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। তবে ইংলিশদের স্কোর ৫০ পেরোতেই জোড়া আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। এরপর ইংলিশ ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডখ্যাত ইয়ন মরগান ও পল কলিংউডকে ফিরিয়ে দেন আবদুর রাজ্জাক। শেষদিকে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কিপটে বোলিংয়ে তিন বল বাকি থাকতেই ২৩১ রানে থেমে যায় ইংলিশদের ইনিংস। বল হাতে মাশরাফি, আবদুর রাজ্জাক, শফিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন ও সাকিব আল হাসান প্রত্যেকেই নেন দুটি করে উইকেট। ব্যাট হাতে ২২ রান ও দারুণ বল করে দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন মাশরাফি। টাইগারদের সামনে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা ছিল, তবে শেষ ম্যাচটা হেরে প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে।
১১ মার্চ ২০১১, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
প্রথম জয়ের এক ম্যাচ পরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ইংলিশদের বিপক্ষে সেই জয়টা অবশ্য কোনো মহাকাব্যের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথটা পিচ্ছিল হয়ে যায় বাংলাদেশের। তার ওপর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ায় টাইগার সমর্থকদের আস্থা হারাতে থাকেন সাকিব-তামিমরা। সমর্থকদের আস্থা ফেরাতে দারুণ এক জয়ের দরকার ছিল বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে আসে বহুল প্রতীক্ষিত সেই জয়।
টস হেরে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে অসহায় হয়ে ৪৯.৪ ওভারে ২২৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশদের ইনিংস। ২২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। তবে এরপরই পথ হারিয়ে বসে টাইগাররা। একটা পর্যায়ে ১৬৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শফিউল ইসলামের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে এক ওভার হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ২৪ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন শফিউল। আর মহামূল্যবান ২১ রান করেন রিয়াদ।
৯ মার্চ ২০১৫, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া
২০১১ সালের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে আর কোনো ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়নি ইংল্যান্ড। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে আবার টাইগারদের সামনে পড়ে ইংলিশ লায়নরা। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসাধারণ এক শতকে ২৭৫ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর করেন ৮৯ রান। ২৭৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে ২৬০ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশদের ইনিংস। বল হাতে চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের এই অসাধারণ জয়ের অন্যতম রূপকার রুবেল হোসেন। ১৫ রানের এই জয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।
৯ অক্টোবর ২০১৬, মিরপুর
তৃতীয় জয়ের পর আর এক ম্যাচের ব্যবধানে চতুর্থ জয়টা আসে বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি বিন মুর্তজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঢাকায় ইংল্যান্ডকে ৩৪ রানে হারায় টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহর ৭৫ ও মাশরাফির ৪৪ রানে ভর করে ২৩৯ রানের মাঝারি স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ২০৪ রানে। মাশরাফি চারটি ও তাসকিন তিনটি করে উইকেট নেন।