সেই কার্ডিফেই আরেকটি মহাকাব্য
কার্ডিফ! নামটাই হয়তো শিহরণ জাগায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। ২০০৫ সালে ওয়েলসের এই মাঠেই সে সময়ের অজেয় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল লাল-সবুজের দল। এক যুগ পর আবার সেই মাঠে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ লিখল আরেকটি মহাকাব্য। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর অসাধারণ দুটি শতকে ভর করে ৫ উইকেটে হারাল নিউজিল্যান্ডকে। টিকে থাকল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে।
হারলেই বিদায়- এমন সমীকরণ সামনে রেখে বাঁচামরার এই ম্যাচে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। শুরুতে বল হাতে ভালো নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন মাশরাফিরা। নিউজিল্যান্ডকে বেঁধে ফেলেছিলেন ২৬৫ রানে। কিন্তু ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই পড়েছিল ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে। ৩৩ রানেই সাজঘরে ফিরেছিলেন প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের জয়ের আশা হয়তো ছেড়েই দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু তখনও কারো কোনো ধারনাই ছিল না যে, অসাধারণ এক প্রতিরোধগাথা লিখবেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
অনেক চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অভিজ্ঞ এই দুই ব্যাটসম্যান। পঞ্চম উইকেটে গড়েছেন ২২৪ রানের রেকর্ডগড়া জুটি। বাংলাদেশের পক্ষে যে কোনো উইকেটে এটাই এখন সর্বোচ্চ রানের জুটির নতুন রেকর্ড। ৪৭তম ওভারে ১১৫ বলে ১১৪ রান করে সাকিব যখন সাজঘরে ফিরেছেন, তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ৯ রান। বাকি কাজটুকু অনায়াসেই সেরেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১০৭ বলে ১০২ রানের নজরকাড়া ইনিংস। ১৬ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাউদি সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন দারুণ ফর্মে থাকা তামিম ইকবালকে। রানের খাতা না খুলেই ফিরে যেতে হয়েছে বাঁহাতি এই ওপেনারকে। নিজের পরের ওভারে সাউদি আউট করেছেন সাব্বির রহমানকে। আর তার পরের ওভারে সাউদির শিকার হয়েছেন সৌম্য। তিনজনের কেউই পেরোতে পারেননি দুই অঙ্কের কোটা। দ্বাদশ ওভারে ১৪ রান করে মুশফিকও ধরেছেন সাজঘরের পথ। অ্যাডাম মিলনের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা।
এর আগে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। রস টেলর ও কেইন উইলিয়ামসন নিউজিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখালেও ইনিংসের শেষপর্যায়ে দারুণ বোলিং করেছেন রুবেল- মাশরাফি-সৈকতরা। নিউজিল্যান্ডকে আটকে দিয়েছেন ২৬৫ রানে। মাত্র ১৩ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন দুই উইকেট। একটি করে উইকেট গেছে মুস্তাফিজ ও রুবেলের ঝুলিতে।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রানের ইনিংস খেলেছেন টেলর। অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৭ রান। ৩৬ ও ৩৩ রানের ছোট দুটি ইনিংস খেলেছেন নেইল ব্রুম ও ওপেনার মার্টিন গাপটিল।
আজকের এই হারের ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের। আর বাংলাদেশের আশা টিকে থাকল বেশ ভালোমতোই। আগামীকাল শনিবার অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচে ইংল্যান্ড জিতলে বা ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে সেমিফাইনালে চলে যাবে বাংলাদেশ।