তলানির পাকিস্তানের মাথাতেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট
পাকিস্তান এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নিয়েছিল ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের আট নম্বর দল হিসেবে। ওয়ানডের সেরা আটটি দলের এই লড়াইয়ে পাকিস্তান ছিল একেবারে তলানিতে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে ১২৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেও গিয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ীরা। কোনোমতে পেয়েছিল সেমিফাইনালের টিকিট। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষে সেই পাকিস্তানই হেসেছে শিরোপাজয়ের হাসি। আইসিসির এলিট এই প্রতিযোগিতার মুকুটটি শেষপর্যন্ত উঠেছে সেই তলানিতে থাকা পাকিস্তানেরই মাথায়।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর আগে কেউ হয়তো ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি যে, শেষপর্যন্ত পাকিস্তানকেই দেখা যাবে শিরোপাজয়ীর মঞ্চে। প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে উঠতে। কিন্তু অকল্পনীয় সেই কীর্তিটিই করে দেখিয়েছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারানোয় হয়তো আনন্দটা দ্বিগুণও হয়ে গেছে পাকিস্তানের সমর্থকদের।
অথচ নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে হেরে হোঁচট খেয়েছিল পাকিস্তান। বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে লড়াইয়ে ফিরেছিল সরফরাজ আহমেদের দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের বাঁচা-মরার ম্যাচে পাকিস্তান জয় পেয়েছিল খুবই ধুঁকতে ধুঁকতে। সেই ম্যাচে লঙ্কান ফিল্ডাররা দুটি সহজ ক্যাচ না ফেললে হয়তো সেমিফাইনালেই আসা হতো না পাকিস্তানের। গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই বাজে ফিল্ডিংয়ের জন্য সমালোচিতও হয়েছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা।
কিন্তু নকআউট পর্বে যেন নিজেদের পুরোপুরিই বদলে ফেলেছিলেন সরফরাজ-শোয়েব মালিকরা। সেমিফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ৮ উইকেটের দাপুটে জয়। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে; সব দিক থেকেই ইংল্যান্ডকে নাজেহাল করেছিল পাকিস্তান। আরেক সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে ভারতও পেয়েছিল সেমিফাইনালের টিকিট। তৈরি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের জমজমাট এক ম্যাচের হাতছানি।
ফাইনালে অবশ্য উত্তেজনাপূর্ণ কোনো পরিস্থিতিই তৈরি করতে পারেননি দুই দলের ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে ভারত। শুরুতে ব্যাটিং করে পাকিস্তান জমা করেছিল ৩৩৮ রানের পাহাড়। এবারের টুর্নামেন্টে দারুণ নৈপুণ্য দেখানো ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের আশেপাশেও যেতে পারেননি। ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হয়ে মাত্র ১৫৮ রানেই গুটিয়ে গেছে ভারতের ইনিংস। পাকিস্তান পেয়েছে ১৮০ রানের বিশাল জয়। প্রথমবারের মতো জিতেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শেষ ম্যাচে ভারতকে হারানোর পর ওয়ানডে র্যাংকিংয়েও অনেক উন্নতি হয়েছে পাকিস্তানের। আট নম্বর দল হিসেবে টুনামেন্ট শুরু করলেও এখন পাকিস্তান উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। সপ্তম ও অষ্টম স্থানে নেমে যেতে হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে।