বিশ্বকাপ মাতাতে পারেন যে তরুণ-তুর্কিরা!
বিশ্বকাপের আসর মানেই ফুটবল মাঠের বড় সব জাদুকরের মিলন মেলা। তেমনি রাশিয়ার মাঠেও আসছে বিশ্বকাপটা নিজেদের আলোতে আলোকির করতে প্রস্তুত লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের মতো তারকারা। তবে, মহারথীদের পাশে দাঁড়িয়ে তরুণ বেশ কজন ফুটবলারও আছেন পায়ের জাদুতে মাঠ মাতানোর অপেক্ষায়। আসুন, নজর বোলানো যাক নিজেদের রঙে বিশ্বকাপ রাঙানোর সামর্থ্য রাখেন এমন সাত খেলোয়াড়ের ওপর :
লওতারো মার্টিনেজ, বয়স- ২০ (আর্জেন্টিনা)
তাঁর দেশ থেকেই উঠে এসেছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসিদের মতো তারকারা। মাত্র ২০ বছর বয়েসী লওতারো মার্টিনেজ যেন অনুসরণ করছেন তাঁদেরই পদাঙ্ক। অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বেশি গোলও এসেছে তাঁর পা থেকেই।
চলতি আর্জেন্টাইন সুপার লিগ মৌসুমেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলের মালিক রেসিং ক্লাবের হয়ে খেলা মার্টিনেজরই। এমনিতেই আক্রমণভাগে দুর্দান্ত কিছু সৈনিক নিয়ে নীল-আকাশি শিবির পুরোপুরি প্রস্তুত লড়াইয়ে ঝাঁপাবার জন্য। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় দলে মার্টিনেজের মতো তরুণ তুর্কিরা সুযোগ পেলে যে ঢেলে দিতে চাইবেন নিজেদের সেরাটা তেমনটা নিশ্চিতই।
গনসালো গুইদেস, বয়স- ২১ (পর্তুগাল)
মার্টিনেজ যেমন উঠে এসেছেন মেসি-ম্যারাডোনার দেশ থেকে, তেমনি ফিগো-রোনালদোদের দেশ থেকেও আলো ছড়িয়েছেন গনসালো গুইদেসের মতো সম্ভাবনাময় হবু তারকা। ২১ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ অবশ্য এখনি পাল্লা দিচ্ছেন মেসির সঙ্গে। লা-লিগায় সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট করা খেলোয়াড়ের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ভ্যালেন্সিয়ার এই উইঙ্গার।
মূলত প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের(পিএসজি) খেলোয়াড় হলেও বর্তমানে গুইদেস ধারে খেলছেন ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে। রাশিয়ার মাঠে রোনালদো তো থাকছেনই। বিশ্বকাপে তিনি ও গুইদেস- দুই উইঙ্গারে ভর করে দারুণ কিছুর প্রত্যাশা করলেও করতে পারে বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়নরা।
হারভিং লজানো, বয়স-২২ (মেক্সিকো)
ডাচ ক্লাব পিএসভির হয়ে এই মৌসুমে হারভিং লজানো নিজে করেছেন ১৭ গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১১টি। ক্লাবটি এই মুহূর্তে রয়েছে শেষ চার বছরে নিজেদের তৃতীয় লিগ শিরোপার দ্বারপ্রান্তে। পিএসভির এমন অর্জনের অন্যতম কারিগর মেক্সিকোর ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার লজানো।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে আদর্শ মানা লজানো নিজেও তাঁর মতোই দারুণ দ্রুতগতি সম্পন্ন। ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে চিলের মতো ছোঁ দিয়ে শিকার করে নেন গোল। তাই রাশিয়ায় এই তরুণের ওপর চোখটা রাখতে বাধ্য সবাই। বিশ্বকাপে মেক্সিকোর ভালো কিছু করতে হলে তাঁকেও জ্বলে উঠতে হবে নিজের শক্তিতে!
ড্যাভিনসন সানচেজ, বয়স-২২ (কলম্বিয়া)
টোটেনহ্যাম হটস্পারসের ড্যাভিনসন সানচেজ এই মুহূর্তে পুরো কলম্বিয়ারই ভরসা। রক্ষণভাগের ২২ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় শেষ বছর আয়াক্সের হয়ে জিতেছিলেন সে বছরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার গোলের দুর্গে প্রতিপক্ষের আঘাত হানতে হলে সানচেজকে ভাবনায় রেখেই করতে হবে পরিকল্পনা।
লুকাস তোরেইরা, বয়স-২২ (উরুগুয়ে)
ইতালীয় ক্লাব স্যাম্পদোরিয়ার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লুকাস তোরেইরা রয়েছেন উরুগুয়ের বিশ্বকাপ পরিকল্পনার অনেকটা জুড়েই। ২২ বছর বয়সেই ক্লাব আর দলের দুইয়ের হয়েই খেলছেন দারুণ ধারাবাহিক ফুটবল। বল পায়ে তাঁর দক্ষতা তো নজর কাড়বেই, তাঁর চেয়েও বেশি নজর কাড়বে তাঁর ট্যাকলিংয়ের ক্ষমতা। বল পায়ে দৌড়ে আসা প্রতিপক্ষ শিবির টেরও পাবে না কখন দারুণ ট্যাকলিংয়ে নিজের পায়ে বল নিয়ে গেছেন তোরেইরা।
সার্জেই মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচ, বয়স-২৩ (সার্বিয়া)
ল্যাজিওর এই মিডফিল্ডারকে বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোতে নাকি ঠিকঠাক সুযোগটাই দেননি সার্বিয়ার কোচ! দলের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে অমন আচরণের কারণে চাকরিটাই হারাতে হয়েছিল স্লাভালুভ মুসলিনকে। তবে সার্বিয়াকে বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দিয়ে সাভিচের এখন অপেক্ষা প্রতিবেশী দেশ রাশিয়ার মাঠ মাতানোর। সে যে ভালো পারবেন মাঝমাঠের এই খেলোয়াড়, সে প্রমাণ দিয়ে রেখেছেন ইতালিয়ান লিগেই।
হাকিম জিয়েখ, বয়স- ২৫ (মরক্কো)
মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তাঁর গায়ে উঠেছে আয়াক্স দলের ‘১০’ নম্বর জার্সিটা। ক্লাব দলের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় হাকিম জিয়েখ যে তাঁর জাতীয় দল মরক্কোরও প্রাণভোমরা, তা বুঝতে বাকি নেই কারোই। মাঝমাঠের খেলোয়াড় হলেও দলের প্রয়োজনে সামলাতে পারেন রক্ষণভাগও। প্রতি ম্যাচে গড়ে চারটার বেশি পাস দিতে সমর্থ হাকিমের ওপরও নজরটা থাকবে অনেকের।