বাংলাদেশিদের বিশ্বকাপ বাঁচিয়ে রাখলেন নেইমাররা!
বড় পর্দায় ব্রাজিল-মেক্সিকোর পাল্টাপাল্টি আক্রমণে খেলা চলছে। ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর দেখে মনে হওয়ার সুযোগ নেই যে জেমসের বৈশাখী কনসার্ট চলছে না! কানায় কানায় পরিপূর্ণ দর্শকে ঠাসা ধানমণ্ডির লেকপাড়। খেলা চলাকালীন পর্দার সামনের জনসমুদ্র থেকে একে অপরকে ভুয়া-ভুয়া ডাক দিয়ে চিৎকার তো আছেই। দুই দলই ফিরতি-ফিরতি আক্রমণে। এভাবেই শুরু হয় বিরতি।
মাঝপথ পাড়ি দিয়ে ব্রাজিলের গোল। সে কি চিৎকার, হলুদেরা যেন ফুঁসে উঠে বিশ্বকাপের মিনি স্টেডিয়াম কাপাল! খেলা চলতেই থাকল। চিৎকার-চেচামেচি চলছেই, হাজার হাজার দর্শক বলে কথা। এবার বিরোধী সাপোর্টারদের মনে জ্বালা ধরিয়ে দিয়ে মেক্সিকোর জালে দ্বিতীয় গোল ব্রাজিলের। আহ, উল্লাস! আনন্দে আত্মহারা হওয়া ব্রাজিলের সমর্থকদের নাচানাচি দেখার মতো। ধুলা-বালি আর বোতল উড়ানোটা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই পিছু নিল। পিছু নিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের আট-দশজন শিক্ষার্থী বলতে বলতে চলে যাচ্ছেন, 'বাংলাদেশিদের রাশিয়া বিশ্বকাপ বাঁচিয়ে রাখল ব্রাজিল!'
দলে থাকা আমির হোসেন (১৯) নামের একজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন ও পর্তুগাল সব তো বিদায় নিল। ব্রাজিল যদি কোনো ভাবেই আজ হারত তাহলে বাংলাদেশিদের রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যেত। খেলা দেখলেও সমর্থকের মনোভাব নিয়ে খেলা দেখা শেষ হয়ে যেত। অনেকেই এর পরে শুধু হয়তো ফাইনালের দিকে তাকিয়ে থাকত। তবে সেটা হতে না দিয়ে কোয়াটার ফাইনাল নিশ্চিত করল ব্রাজিল। বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশিদের রাশিয়া বিশ্বকাপ! না হলে সব উল্লাস থেমে যেত।’
দলে থাকা অপর সদস্য ফাহিম মুনায়েম বলেন, ‘আর্জেন্টিনাকে সাপোর্ট করি। চেয়েছিলাম ব্রাজিল হারুক। ব্রাজিলের এমনিতেই ব্রাজিলের জ্বালায় বাঁচা যাচ্ছে না। তবে ব্রাজিল ভালো খেলেছে, মেক্সিকোও ভালো খেলেছে। অভিনন্দন ব্রাজিলকে।’
রবীন্দ্র সরোবর মাঠে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেল থেকেই ধিরে ধিরে ভরে উঠতে শুরু করে রবীন্দ্র সরোবর। সামনে বসে প্রিয় দলের খেলা দেখবেন বলে বিকেল ৫টার পর থেকেই সামনের সারিতে বসে পড়তে শুরু করেন অনেকেই। এদের মধ্যে হাবিবুর রহমান নামের একজন বলেন, ‘এসেছি বিকেল ৫টার আগে। দ্রুত না আসলে সামনে বসে খেলা দেখা যাবে না। গতদিন আর্জেন্টিনার খেলার সময় এসে শেষে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছি। ভালোভাবে খেলা দেখতে পারিনি।’
জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টার আগেই প্রজেক্টের চালু করা হয়েছে এখানে। ইফাদ নামের একটি কোম্পানি এখানে খেলা দেখায় প্রতিদিন। বিকেল হতে সময় যত গড়িয়েছে মানুষে-মানুষে তত ভরে উঠতে শুরু করেছে লেকপাড়। সরোবরের এক কোণে ব্রাজিল খেলোড়দের ছবি দিয়ে প্রতিকৃতিও বানিয়েছে ইফাদ। অনেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।
খেলা দেখতে আসা দর্শকের পরিমাণ জানতে চাইলে মো রহিম নামের একজন মজা করে বলে উঠেন, ‘ধানমণ্ডি লেক আজ নোনা পানিতে ভরে যাবে! সরোবরের এক পাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। দাঁড়ানোর ফাকা কোনো স্থান নেই। সরোবরের সিঁড়িগুলোতে সারিবেঁধে বসে আছে প্রচুর মানুষ। পিছনেও দাঁড়িয়ে আছে অনেকে। অবস্থা এমন যে, অন্তত চত্বরের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে না। আশপাশ এলাকাও মানুষে ভরা। ঠিক একটি ভালো কনসার্টের পরিবেশ যেমন হয় আর কি। জানতে চাইলে প্রজেক্টর বুথ থেকে মামুন নামের একজন বলেন, ‘প্রচুর মানুষ, হাজার সাতেক তো হবেই! দেখছেন না হাঁটার উপায় নেই।’
খেলে শেষ, ব্রাজিল সমর্থকদের দেখার মতো উল্লাস। গোল চত্বরের ভেতরে ধুলা বালু আর বোতল উড়ানো উৎসব চলছে। কারো মাথায় পড়ছে, কারো বা গায়ে। কেউ কিছু মনে করছে না। মাটিতে পড়ে যাওয়া বোতল তুলে আবারও উপরে ভাসিয়ে ছুড়ে মারছে ব্রাজিল ভক্তরা। সবাই উল্লাসে মাতোয়ারা। তখন হলুদ জার্সি পরিহিত দর্শক ছাড়া তেমন কেউ নেই। তবে খেলা শেষে বেশ কিছু আর্জেন্টিনার সমর্থককে গলা ধাক্কা দেওয়ার খণ্ডচিত্র চোখে পড়ে। দ্রুতই অবশ্য পাশের মানুষ এসে এক পক্ষকে অন্য দিকে সরিয়ে দেয়।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হুমায়ুন আহম্মেদ বলেন, “এরা কখন থেকে কথার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। খেলা শেষ হতেই চলে যেতে চাইলে তাকে ধরে রাখে। একটু ধাক্কা দেয়। পরে ওরা চলে গেল। খেলাটাকে আর খেলার পর্যায়ে রাখল না।”
ব্রাজিল জিতে যাওয়ায় উল্লাস প্রকাশ করে ব্রাজিলের সমর্থক আবুল কাসেম বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। ব্রাজিল ভালো খেলেছে। এটাই দরকার ছিল। ব্রাজিলই এবার কাপ নেবে। যে খেলা দেখাল আজ। আজ যদি হেরে যেত তবে আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের জন্য টিকে থাকা যেত না। স্বস্তি লাগছে। সামনে আর ব্রাজিলকে আটকানোর মতো দল দেখছি না। ব্রাজিল এবার কাপ নিবে।”
জার্মানির সমর্থক আবির হোসেন বলেন, ‘যে দলই জিতুক চেয়েছিলাম ভালো খেলা দেখি। বিরতির আগে দেখেছিও। পরে অবশ্য খারাপ খেলা হয়নি, ভালো লেগেছে। তবে গোলের পর মেক্সিকো মনে হলো খেলা ছেড়ে দিয়েছে। ওরাও ভালো খেলেছে।’