‘ফুটবল খেলাটাই কি আমাদের দোষ?’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জর্ডানের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াই। কঠিন ম্যাচটির পরিকল্পনা নিয়েই ব্যস্ত থাকার কথা মামুনুল ইসলামের। বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য অন্য একটি বিষয় নিয়েও চিন্তিত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফরে বাংলাদেশের কয়েকজন খেলোয়াড়-কর্মকর্তার আচরণ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ-হতাশ মামুনুল। কোনো রাখঢাক না করে বাফুফের ফেসবুক পেজে একটি চিঠিও লিখেছেন বাংলাদেশের সেরা মিডফিল্ডার।
‘ফুটবল খেলাটাই কি আমার দোষ?’ শিরোনাম দিয়ে চিঠিতে মামুনুল লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে আমি বলেছিলাম, এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ। কিন্তু কখনোই ভাবিনি, এই ম্যাচটাই আমি ভুলে যেতে চাইব। না, খেলার ফলাফলের জন্য এমনটা বলছি না। ম্যাচের ফলাফল কী হবে, এটা সবার আগে থেকে অনুমেয় ছিল। ম্যাচের আগে-পরে যে ধরনের সমালোচনা আমাদের ফুটবলারদের সহ্য করতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, ফুটবল খেলাটাই আমাদের দোষ।’
এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন, চারটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়া যে কতটা কঠিন কাজ, চিঠিতে সে প্রসঙ্গও উঠে এসেছে, ‘অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা। যে দল বিশ্বকাপ খেলে, এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন, যে দলে টিম ক্যাহিলের মতো একজন তারকা ফুটবলার খেলেন—একজন বাংলাদেশি ফুটবলারের জন্য সেই দলের বিপক্ষে খেলাটাই স্বপ্ন। যখন কেউ কেউ খেলায় গোলবন্যা বইবে বা বড় ব্যবধানে হারবে বাংলাদেশ, এমনটা ভেবে কীভাবে মুখ লুকাবে তা নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তখন আমাদের ফুটবলাররা মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করছিল কীভাবে দেশের সম্মান বাঁচানো যায়। কিন্তু আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে আমরা ফুটবলার, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই, নেই সেলফি তোলার অধিকার। আমরা শুধু জাতিকে লজ্জা দিয়ে থাকি।’
মাঠের বাইরের বিষয় নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়কের বক্তব্য, ‘এবার আসি মাঠের বাইরে আমাদের আচরণের সমালোচনা নিয়ে। এই দলে কিন্তু একঝাঁক তরুণ ফুটবলার আছে, হয়তো নিজেদের আবেগটা তারা এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে শেখেনি, কিন্তু তাদের উচ্ছৃঙ্খল ভাবার কোনো কারণ নেই। এমনিতে আমাদের ফুটবল পিছিয়ে আছে, ফুটবল খেলতে তরুণরা আগ্রহী নয়, এ ধরনের অযাচিত সমালোচনা দেশের ফুটবলের জন্য ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’
অযথা সমালোচনা না করে ফুটবলারদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন দুই বছর ধরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মামুনুল, ‘শত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ফুটবল ফেডারেশন কিন্তু ফুটবলকে জাগিয়ে তোলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। মাঠে আমরা আমাদের সেরাটা দিই, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে হারের পর আমাদের ফুটবলারদের যে কান্না আমি দেখেছি, তাতে কখনোই ফুটবলারদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন জাগে না। আপনারাও নিশ্চয় দেখেছেন সেই কান্না। যদি আসলেই দেশকে আমরা ভালোবাসি, খেলাকে ভালোবাসি, তাহলে দর্শক হিসেবে, মিডিয়াকর্মী হিসেবে সব খেলাকে সমানভাবে দেখা উচিত। খেলোয়াড়দের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত। মাঠের ফল যা-ই হোক, মাশরাফি-সাকিবদের মতো আমরাও লাল-সবুজের প্রতিনিধি।’