অ্যাথলেটিকসের এবার ‘সোনার হরিণ’ চাই
গত বছর গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে অ্যাথলেটিকস দল পাঠায়নি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বা বিওএ। বিওএ কর্মকর্তাদের যুক্তি ছিল, দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এসএ গেমসেই যেখানে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা ভালো করতে পারে না, সেখানে গ্লাসগোতে দেশের আরো লজ্জায় পড়ার আশঙ্কা! পরে ইনচন এশিয়ান গেমসে অ্যাথলেটিকস দল পাঠানো হলেও অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স ছিল করুণ, নিষ্প্রভ।
বিওএর যুক্তিতে ভুল খুঁজে পাওয়া কঠিন। দেশের বাইরে অ্যাথলেটদের সাফল্য অনেক দিন ধরে যেন ‘সোনার হরিণ’! ২০০৬ সালে কলম্বো এসএ গেমসের পর বিদেশের মাটিতে অ্যাথলেটিকস থেকে আর কোনো শিরোপা পায়নি বাংলাদেশ। প্রায় নয় বছর আগে শ্রীলঙ্কার রাজধানী থেকে ১১০ মিটার হার্ডলসে মাহফুজুর রহমান মিঠুর এনে দেওয়া স্বর্ণপদকই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শেষ ‘সোনালি সাফল্য’।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন এ নিয়ে চিন্তিত। তাই এবার আটঘাট বেঁধে নেমেছে তারা। এ বছরের শেষ দিকে ভারতের দিল্লিতে হবে দ্বাদশ এসএ গেমস। এই প্রতিযোগিতা থেকে স্বর্ণ নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।
এসএ গেমসের আগে আগামী এপ্রিলে ঢাকায় হবে দুই বাংলার ক্রীড়াবিদদের প্রতিযোগিতা ইন্দো-বাংলাদেশ বাংলা গেমস। এই গেমসকে সামনে রেখে এরই মধ্যে অ্যাথলেটদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হয়ে গেছে। আর্মি স্টেডিয়ামে এখন নিবিড় অনুশীলনে ব্যস্ত ৩০ জন অ্যাথলেট। তাঁদের মধ্যে ১২ জন নারী। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের লক্ষ্য, এসএ গেমস পর্যন্ত এই ক্যাম্প চালিয়ে যাওয়া।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিশ জানিয়েছেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জয়। ইন্দো-বাংলাদেশ বাংলা গেমসে ভালো করেই আমরা এসএ গেমসের জন্য প্রস্তুত হতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা বেশ আগে থেকেই ক্যাম্প শুরু করে দিয়েছি। দীর্ঘদিন অ্যাথলেটিকসে কোনো আন্তর্জাতিক সাফল্য নেই। ইন্দো-বাংলাদেশ বাংলা গেমস দিয়ে আমরা সেই হতাশা দূর করতে চাই। তারপর সেই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে এসএ গেমসে সাফল্য পেতে চাই।’
আগামী এপ্রিলে চীনের ইউহানে এশিয়ান অ্যাথলেটিকস এবং আগস্টে বেইজিংয়ে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস হবে। এই দুটি প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয় জেনেও শুধু অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ অংশ নেবে।
এ ব্যাপারে ইব্রাহিম চেঙ্গিশের বক্তব্য, ‘আমরা জানি এই দুটি গেমসে আমাদের পক্ষে ভালো করা সম্ভব নয়। তবে এই দুই গেমসে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আমরা পরের প্রতিযোগিতাগুলোতে ভালো করতে চাই। সে জন্যই এশিয়ান এবং বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে অংশ নেব আমরা।’
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন অবশ্য ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলো নিয়মিত আয়োজন করতে পারছে না। জানুয়ারিতে জাতীয় অ্যাথলেটিকস মিট দুবার আয়োজনের পরিকল্পনা করেও পিছিয়ে গেছে তারা। ২০-দলীয় জোটের চলমান হরতাল-অবরোধই তার কারণ।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দেশ একটা ‘স্থিতিশীল’ অবস্থায় এলে জাতীয় অ্যাথলেটিকস মিট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বাইরের জেলা থেকে অ্যাথলেটদের ঢাকায় আনা সম্ভব নয়। আমরা কোনো রকম ঝুঁকি নিয়ে তাদের আনার পক্ষেও নই। তাই এই প্রতিযোগিতা স্থগিত রাখা হয়েছে। দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হলেই ন্যাশনাল মিট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’