দুই বাঁহাতির বিধ্বংসী বোলিং
এবারের বিশ্বকাপে চলছে ব্যাটসম্যানদের রাজত্ব। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ২১টি ম্যাচের মধ্যে ১১-বারই ৩০০ পেরিয়েছে প্রথমে ব্যাট করা দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০৪ রান তাড়া করে জয় পেয়েছে আয়ারল্যান্ড। ক্রিস গেইল করেছেন বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। বোলারদের জীবন দুর্বিষহ করে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বিশ্বকাপে দ্রুততম অর্ধশতক এবং এবি ডি ভিলিয়ার্স ওয়ানডেতে দ্রুততম দেড়শ রানের রেকর্ড গড়েছেন। ব্যাটসম্যানদের এই দাপটের মধ্যে শনিবার জ্বলে উঠলেন দুই বাঁহাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও মিচেল স্টার্ক। বিশ্বকাপের দুই আয়োজক অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের দুই ‘কাণ্ডারি’ তাঁরাই।
অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে শুরুতে চমক দেখান কিউই পেসার বোল্ট। পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেলে কোনো সাফল্য পাননি, বরং দিয়েছিলেন ২৪ রান। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে রীতিমতো আগুন ঝরল তাঁর বাঁ হাত থেকে। পাঁচ ওভারের সেই স্পেলে মাত্র তিন রানের বিনিময়ে বোল্টের শিকার পাঁচ উইকেট। এমন বিধ্বংসী স্পেল (৫-৩-৩-৫) খুব কমই দেখেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। সব মিলিয়ে বোল্টের বোলিং ফিগার ১০-৩-২৭-৫।
বোল্টের দুর্দান্ত বোলিং অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ১৫১ রানে। বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করে এটাই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন রান। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৫১ রানে অলআউট হয়েছিল তারা। তবে ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করেছিল পরে। ক্রিকেটের সেরা আসরে অস্ট্রেলীয়দের সর্বনিম্ন ইনিংস ১২৯ রানের, ১৯৮৩ সালে ভারতের বিপক্ষে।
ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ঝড়ো ব্যাটিং ১৫২ রানের লক্ষ্যের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে দিচ্ছিল কিউইদের। অধিনায়কের ২৪ বলে ৫০ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস আট ওভারেই ৭৯ রান এনে দেয় নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু স্টার্কের অসাধারণ বোলিং সহজে জিততে দেয়নি স্বাগতিক দলকে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মার্টিন গাপটিলকে ফেরানোর পর নবম ওভারে পরপর দুই বলে রস টেলর ও গ্র্যান্ট এলিয়টকে বোল্ড করেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার।
তবে কেইন উইলিয়ামসন আর কোরি অ্যান্ডারসনের ৫২ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৯ ওভারে চার উইকেটে ১৩০ রান তুলে জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ২২ রান দূরে থাকা কিউইরা মূল্যবান দুটো পয়েন্ট পেয়েছে অনেক ঘাম ঝরিয়ে। স্টার্কের আগুনঝরা বোলিংই তার কারণ।
লুক রনকি, অ্যাডাম মিল্ন ও টিম সাউদিকে একে একে ফিরিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন স্টার্ক। শেষ পর্যন্ত কেইন উইলিয়ামসনের দৃঢ়তা এক উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে।
তবে স্টার্কের বোলিং ঠিকই আলো ছড়িয়েছে ইডেন পার্কে। নয় ওভার বল করে ২৮ রানের বিনিময়ে তাঁর শিকার ছয় উইকেট। তিন ওভারের প্রথম স্পেলে ২০ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। তিন ওভারের দ্বিতীয় স্পেলে মাত্র চার রানের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেন দুজনকে। তৃতীয় স্পেলটা আরো বিধ্বংসী। এবারও তিন ওভার বল করে চার রান দিয়ে তুলে নেন তিনটি উইকেট।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় বোল্ট, বিজয়ী দলের আনন্দিত সদস্যও তিনি। তবে শনিবার একটি বিষয় মিলিয়ে দিয়েছে স্টার্ক ও বোল্টকে। দুজনেই ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন। এক ম্যাচে বাঁহাতি পেসারদের ১২ উইকেট নেওয়ার ঘটনাও এই প্রথম দেখল ওয়ানডে ক্রিকেট। স্টার্কের ছয় ও বোল্টের পাঁচ উইকেটের পাশাপাশি একটি উইকেট নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসন।