আরো উজ্জ্বল শেষ আটের স্বপ্ন
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল-স্বপ্ন পূরণের পথে এক ধাপ এগোল বাংলাদেশ। ৩১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১১ বল হাতে রেখে স্কটল্যান্ডকে সহজেই ছয় উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফির দল। বাংলাদেশের শেষ আটের আশা বাঁচিয়ে রাখতে তামিম ইকবালের বিশাল অবদান। এই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছে ৯৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের ‘রেকর্ড’। আগেরটা ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৯ সালে ৩১৩ রান তাড়া করে জয়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ৩০০ পেরোনোর সাক্ষীও হয়ে রইল নেলসনের স্যাক্সটন ওভাল।
এত সব কীর্তির মাঝে বাংলাদেশকে একটা তথ্য অনুপ্রাণিত করবেই। ইংল্যান্ড- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচের একটিতে জিতলেই বহু আরাধ্য কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পেয়ে যাবেন সাকিব-মুশফিকরা।
একে তো ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে ব্যথা পেয়ে ওপেনার এনামুল হক মাঠের বাইরে। তার ওপর কঠিন লক্ষ্য। ব্যাট করতে নামার সময় বাংলাদেশের সামনে ছিল বিশাল চাপ। সেই চাপ বাড়িয়ে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সৌম্য সরকার আউট!
তবে তামিম ও মাহমুদউল্লাহর দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের পথে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে গড়েছেন ১৩৯ রানের জুটি। বিশ্বকাপে এটাই এখন বাংলাদেশের সেরা জুটি। আগের সেরা জুটির জন্ম এই বিশ্বকাপেই—গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ১১৪ রান।
২৪তম ওভারে ৬২ বলে ৬২ রান করে মাহমুদউল্লাহ ফিরে আসার সময় স্কোর ১৪৪/২। তখনই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর ‘ঝড়’ তোলেন মুশফিক। তবে ৪২ বলে ছয়টি চার ও দুটি ছক্কায় ৬০ রান করা বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন অযথা তুলে মারতে গিয়ে। মুশফিকের আগেই ফিরে যান তামিম। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন। সেঞ্চুরিটা যখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার ঠিক তখনই তামিম এলবিডব্লিউ। তাঁর ১০০ বলে খেলা ৯৫ রানের আক্ষেপ জাগানো ইনিংসে ৯টি চার ও একটি ছক্কা। একটা মাইলফলক অবশ্য স্পর্শ করেছেন তামিম। সাকিবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে চার হাজার রান করেছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার।
দলীয় ২০১ রানে তামিম ও ২৪৭ রানে মুশফিক ফিরে এলেও জয়ের জন্য দুর্ভাবনায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। পঞ্চম উইকেটে সাকিব ও সাব্বির রহমান মাত্র ৬১ বলে ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছেন। বাউন্ডারি মেরে জয় এনে দেওয়া সাকিবের ৪১ বলে অপরাজিত ৫২ রানে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কা। ৪০ বলে ৪২ রানে অপরাজিত সাব্বির বিখ্যাত সতীর্থর চেয়ে চার একটি কম মারলেও ছক্কা মেরেছেন একটি বেশি।
সকালে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। মাশরাফিদের ওপর সবচেয়ে ‘খড়্গহস্ত’ ছিলেন কাইল কোটজার। ১৩৪ বলে ১৭টি চার ও চারটি ছক্কা সমৃদ্ধ ১৫৬ রানের দারুণ এক ইনিংস এসেছে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। বিশ্বকাপে এটাই কোনো স্কটিশ ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি। কোটজারের সঙ্গে প্রেস্টন মমসেন (৩৯), ম্যাট মাচান (৩৫), রিচি বেরিংটনদের (২৬) দৃঢ়তা ৩০০ রানের ওপরে নিয়ে যায় স্কটল্যান্ডকে।
৪৩ রানে তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার তাসকিন আহমেদ। ৩২ রানে নাসির হোসেনের শিকার দুই উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
স্কটল্যান্ড : ৫০ ওভারে ৩১৮/৮ (কোটজার ১৫৬, ম্যাক্লাউড ১১, গার্ডনার ১৯, মাচান ৩৫, মমসেন ৩৯, বেরিংটন ২৬, ক্রস ২০, ডেভি ৪*, মাজিদ ১, ইভান্স ০*; তাসকিন ৩/৪৩, নাসির ২/৩২, সাকিব ১/৪৬, সাব্বির ১/৪৭, মাশরাফি ১/৬০)।
বাংলাদেশ : ৪৮.১ ওভারে ৩২২/৪ (তামিম ৯৫, সৌম্য ২, মাহমুদউল্লাহ ৬২, মুশফিক ৬০, সাকিব ৫২*, সাব্বির ৪২*; ডেভি ২/৬৮, ইভান্স ১/৬৭, ওয়ার্ডল ১/৭৫)।
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : কাইল কোটজার।