পেসারদের তোপে পাকিস্তানের দারুণ জয়
ক্রিকেট-দুনিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার একটা ব্যঙ্গাত্মক নাম আছে—‘চোকার্স’! মানে চাপের মুখে ভেঙে পড়া দল। তেমনি পাকিস্তানের আরেক নাম ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ বা অননুমেয় দল। শনিবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে এই দুটো নামের সার্থকতাই যেন প্রমাণিত হলো আরেকবার। চাপের মুখে ভেঙে পড়ার আরেকটি উদাহরণ তৈরি করে পরাস্ত হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ২৯ রানের জয় দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
‘বি’ গ্রুপে পাঁচটি করে ম্যাচ খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের সংগ্রহ ছয় পয়েন্ট করে। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকানদের অবস্থান দ্বিতীয়। টানা চার ম্যাচ জিতে শেষ আট নিশ্চিত করেছে ভারত।
২৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই কুইনটন ডি কককে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়ে প্রোটিয়াদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন অন্য ওপেনার হাশিম আমলা ও ফাফ ডু প্লেসি। কিন্তু দশম ও একাদশ ওভারে দুজনকেই হারায় প্রোটিয়ারা। ডু প্লেসিকে (২৭) ফেরান রাহাত আলী, আমলা (৩৮) ওয়াহাব রিয়াজের শিকার। দুজনই কট বিহাইন্ড।
এরপর ওয়াহাব রিলি রুসোকে সোহেল খানের ক্যাচ বানানোর পর ডেভিড মিলারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রাহাত। ১০ রানের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকানরা তখন বেশ বিপদে। বিপদ অবশ্য দূর হয়নি। বরং ৭৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারানো দলের বিপদ বাড়িয়ে ২০তম ওভারে আউট হয়ে যান জেপি ডুমিনি। স্কোর তখন ১০২/৬।
এমন বিপর্যয়ের মধ্যে রুখে দাঁড়িয়ে ‘টেল এন্ডার’দের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু অধিনায়কের ৫৮ বলে ৭৭ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয় এনে দিতে পারেনি।
তিনটি করে উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের জয়ে বড় অবদান তিন বাঁ-হাতি পেসার মোহাম্মদ ইরফান, ওয়াহাব রিয়াজ ও রাহাত আলীর।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে তেমন বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি পাকিস্তান। বৃষ্টির কারণে ৪৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ২২২ রানে অলআউট হয়ে যায় মিসবাহর দল। তবে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩২ রান।
পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রানের ইনিংস আসে অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকের ব্যাট থেকে। বিশ্বকাপে অভিষেককে রঙিন করে রেখে ৪৯ বলে ৪৯ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন ওপেনার সরফরাজ আহমেদ। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও তিনি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। নবম ওভারে ডেল স্টেইনের দারুণ এক ক্যাচ বানিয়ে আহমেদ শেহজাদকে (১৮) ফিরিয়ে দেন কাইল অ্যাবট। মিডউইকেটের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন শেহজাদ। পেছাতে-পেছাতে প্রায় পাখির মতো উড়ে বল মুঠোবন্দি করেন লুফে স্টেইন।
দ্বিতীয় উইকেটে সরফরাজ ও ইউনিস খানের ৬২ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। তবে এই জুটিও ভেঙে গেছে প্রোটিয়াদের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে, সরফরাজের রানআউটের মাধ্যমে। ৩৭ রান করা ইউনিসকে ফেরান ডি ভিলিয়ার্স। এরপর মিসবাহর দৃঢ়তার সঙ্গে শহীদ আফ্রিদির ১৫ বলে ২২ রানের ‘ক্যামিও’ ইনিংস সোয়া দুশর কাছাকাছি নিয়ে যায় পাকিস্তানকে।
৩০ রানে তিন উইকেট নেওয়া স্টেইন প্রোটিয়াদের সেরা বোলার। দুটি করে উইকেট অ্যাবট ও মর্নে মরকেলের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান : ৪৬.৪ ওভারে ২২২ (সরফরাজ ৪৯, শেহজাদ ১৮, ইউনিস ৩৭, মিসবাহ ৫৬, মাকসুদ ৮, উমর ১৩, আফ্রিদি ২২, রিয়াজ ০, সোহেল ৩, রাহাত ১, ইরফান ১*; স্টেইন ৩/৩০, মরকেল ২/২৫, অ্যাবট ২/৪৫, তাহির ১/৩৮, ডি ভিলিয়ার্স ১/৪৩)
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩৩.৩ ওভারে ২০২ (ডি কক ০, আমলা ৩৮, ডু প্লেসি ২৭, রুসো ৬, ডি ভিলিয়ার্স ৭৭, মিলার ০, ডুমিনি ১২, স্টেইন ১৬, অ্যাবট ১২, মরকেল ৬*, তাহির ০; রাহাত ৩/৪০, রিয়াজ ৩/৪৫, ইরফান ৩/৫২, সোহেল ১/৩৬)
ফল : পাকিস্তান ডাকওয়ার্থ-লু্ইস পদ্ধতিতে ২৯ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : সরফরাজ আহমেদ।