সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার দারুণ জয়
কুমার সাঙ্গাকারার ইতিহাসগড়া আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অনেক অপেক্ষার সেঞ্চুরিতে ধন্য হলো সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। আরেকটি রান-বন্যার ম্যাচেরও সাক্ষী হয়ে রইল ঐতিহাসিক মাঠটি। রোববার শ্রীলঙ্কাকে ৬৪ রানে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান প্রায় নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ার।
পাঁচটি করে ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ১০, ৭ ও ৬ পয়েন্ট। তিন দলেরই আর একটি করে ম্যাচ বাকি। তবে শেষ প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড বলে অস্ট্রেলীয়দের গ্রুপ রানার্স-আপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
৩৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় পাঁচ রানে লাহিরু থিরিমান্নেকে হারানোর পর তিলকারত্নে দিলশান ও কুমার সাঙ্গাকারার ১৩০ রানের দারুণ জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কানরা। ৬০ বলে ৬২ রান করা দিলশানকে এলবিডব্লিউ করে জুটিটা ভেঙে দেন জেমস ফকনার। এরপর ৫৩ রানের জুটি গড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। জয়াবর্ধনে ১৯ রান করে রানআউট হলেও সাঙ্গাকারা ইতিহাস গড়েই ফিরে এসেছেন।
এর আগে ওয়ানডেতে ছয়জন টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও বিশ্বকাপে এমন অসাধারণ কীর্তি সাঙ্গাকারারই প্রথম। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৫ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। রোববার অবশ্য আউট হয়ে গেছেন ১০৪ রান করে। ১০৭ বলের চমৎকার ইনিংসটায় ১১টি চার থাকলেও কোনো ছক্কা নেই।
৩৪তম ওভারে সাঙ্গাকারার বিদায়ের সময় স্কোর দাঁড়ায় ২০১/৪। এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন দীনেশ চান্দিমাল। চান্দিমাল-ঝড় আরেকটু দীর্ঘ হলে ম্যাচটা হয়তো জিতেই যেত তারা। কিন্তু শ্রীলঙ্কার দুর্ভাগ্য, ডান পায়ের পেশিতে টান পড়ায় ৪২তম ওভারে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় চান্দিমালকে। এর আগে মাত্র ২৪ বলে ৫২ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সেই ওভারে অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসও (৩৫) আউট হয়ে গেলে শ্রীলঙ্কার জয়ের আশাও শেষ হয়ে যায়।
এর আগে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড দেখেছে এক ব্যাটসম্যানের অনেক প্রতীক্ষার সেঞ্চুরি। নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছেন তিনবার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে হতাশায় পুড়েছেন ৮৮ রানে ফিরে। অবশেষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। একটুর জন্য বিশ্বকাপে কেভিন ও’ব্রায়েনের ৫০ বলে দ্রুততম শতকের রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। তবে ৫১ বলে সেঞ্চুরি করেই যে কতটা খুশি, তা ম্যাক্সওয়েলের উদযাপনেই বোঝা গেছে। ম্যাক্সওয়েলের তিন অঙ্ক ছোঁয়ার উল্লাসের সঙ্গে অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, স্টিভেন স্মিথ আর শেন ওয়াটসনের ফিফটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ উইকেটে ৩৭৬ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। পঞ্চম ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারকে (৯) ফিরিয়ে দেন লাসিথ মালিঙ্গা। নবম ওভারে ২৪ রান করে সিক্কুগে প্রসন্নর শিকার হয়েছেন অ্যারন ফিঞ্চ। স্কোর তখন ৪১/২।
তবে তৃতীয় উইকেটে ক্লার্ক-স্মিথের ১৩৪ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৩২তম ওভারে মালিঙ্গার বলে বোল্ড হওয়া ক্লার্কের ব্যাট থেকে আসে ৬৮ বলে ৬৮ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস। দিলশানের করা পরের ওভারে ৭২ রান করে ফিরে যান স্মিথও।
১৭৭ রানে চতুর্থ উইকেট পড়লেও ম্যাক্সওয়েল আর ওয়াটসনের ঝড়ো ব্যাটিং পৌনে চারশর ওপরে নিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়াকে। সেঞ্চুরি করেই আউট হয়ে যাওয়া ম্যাক্সওয়েলের ৫৩ বলে ১০২ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংসটা সাজানো ১০টি চার ও চারটি ছক্কায়। ৪১ বলে ৭টি চার ও দুটি ছক্কায় ওয়াটসনের অবদান ৬৭ রান। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৮২ বলে ১৬০ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ৫০ ওভারে ৩৭৬/৯ (ফিঞ্চ ২৪, ওয়ার্নার ৯, স্মিথ ৭২, ক্লার্ক ৬৮, ম্যাক্সওয়েল ১০২, ওয়াটসন ৬৭, ফকনার ০, হ্যাডিন ২৫, জনসন ৩*, স্টার্ক ০, ডোহার্টি ০*; মালিঙ্গা ২/৫৯, পেরেরা ২/৮৭, দিলশান ১/৩৩, ম্যাথিউস ১/৫৯)
শ্রীলঙ্কা : ৪৬.২ ওভারে ৩১২ (থিরিমান্নে ১, দিলশান ৬২, সাঙ্গাকারা ১০৪, জয়াবর্ধনে ১৯, ম্যাথিউস ৩৫, চান্দিমাল আহত অবসর ৫২, পেরেরা ৮, থারাঙ্গা ৪, প্রসন্ন ৯, সেনানায়েকে ৭, মালিঙ্গা ০*; ফকনার ৩/৪৮, স্টার্ক ২/২৯, জনসন ২/৬২, ওয়াটসন ১/৭১)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৬৪ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।