২০১৫
ফুটবলে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি
২০১৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের শুরুটা হয়েছিল হার দিয়ে। গত জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে মালয়েশিয়া অনূর্ধ্ব-২২ দলের কাছে এক গোলে হেরেছিলেন মামুনুল-এমিলিরা। অবশ্য তাঁরা বছরটা শেষ করেছে জয় দিয়ে। কেরালায় চলমান সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে। হার দিয়ে শুরু, জয় দিয়ে বছরটা শেষ করলেও গত এক বছরে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ব্যর্থতার পাল্লাটাই ভারি ছিল।
সব মিলিয়ে এ বছর জাতীয় দল ১৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে মাত্র চারটি ম্যাচে জিতেছে এবং হেরেছে ১১টি ম্যাচে। বাকি তিনটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
অবশ্য বছরের শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছিল জাতীয় দলের। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়েছিল তারা। ফাইনালে মালয়েশিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল তারা।
অবশ্য পরবর্তী সময়ে এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা মোটেও ধরে রাখতে পারেনি জাতীয় দল। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের সাতটি ম্যাচ খেলেছে যার মধ্যে একটি মাত্র ম্যাচে ড্র করেছে, বাকি ছয়টি ম্যাচেই হেরেছিলেন মামুনুলরা। ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের অধীনে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে চারটি ম্যাচ খেলে তার মধ্যে তিনটিতেই হার এবং একটি ম্যাচ ড্র করেছিল তাঁর দল।
তাই ২০১৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্রুইফকে বিদায় করে দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ইতালিয়ান কোচ ফাবিও লোপেজকে দায়িত্ব দেয় বাফুফে। চার মাসের দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারননি তিনি। তাঁর অধীনে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের তিনটি ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ, তাই গত নভেম্বরে ছাঁটাইয়ের কবলে পড়েন এই ইতালিয়ান।
লোপেজকে বিদায় করে দেশীয় কোচে আস্থা রাখে বাফুফে। দায়িত্ব দেওয়া হয় মারুফুল হককে। তাঁর অধীনে আরো লজ্জাজকন ব্যর্থতা। সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এই টুর্নামেন্টের ব্যর্থতায় কোচ নিজে থেকেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
শুধু আন্তর্জাতিক ফুটবলেই ব্যর্থতা নয়, ঘরোয়া আসরগুলোও খুব একটা ভালোভাবে আয়োজন করতে পারছেন না বাফুফে। অনেকটা দায়সারাভাবে আয়োজন করছে তারা। মানহীন এই আসরগুলোতে দর্শকদেরও তাই থাকে না খুব একটা আগ্রহ।
বরং খেলার চেয়ে খেলার বাইরের নেতিবাচক খবরগুলোই বেশি আলোচনায় থাকে। বিশেষ করে গত কিছুদিন ধরে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদেরের দ্বন্দ্ব এখন সবার মুখরোচক আলোচনা। দুই বন্ধুর এই দ্বন্দ্ব এতটাই চরম পর্যায়ে, প্রিমিয়ার লিগ থেকে শেখ জামাল ক্লাবের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন মনজুর কাদের।
সবচেয়ে হতাশার কথা, এ বছরের শুরুতে সিলটে বাফুফে একাডেমির কার্যক্রম শুরু করেও তা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন সেই একাডেমির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে।
এত হতাশার মাঝে কিছুটা সাফল্যও রয়েছে। চট্টগ্রাম আবাহনীর আয়োজনে বন্দরনগরিতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্ট বেশ সাফল্যের সঙ্গে আয়োজন করতে পেরেছে। এই আসরের চ্যাম্পিয়নও হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
তা ছাড়া গত আগস্টে সিলেটে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং অক্টোবরে নেপালে মেয়েদের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় কিছুটা বার্তা এনে দিয়েছে চেষ্টা করলে সাফলতা পাওয়া সম্ভব।
তবে বাংলাদেশের ফুটবলে যে চরম অধোগতি, তার প্রমাণ দেখা গেছে বছরের শেষ দিকে এসে ফিফা র্যাংঙ্কিয়ে। বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৮২।
ফুটবল দলের ব্যর্থতায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, ‘সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের দল যে ব্যর্থতা দেখিয়েছে, এতে আর সবার মতো আমিও খুবই হতাশ। এই আসরে আমাদের প্রত্যাশা ছিল শিরোপা জয়ের, কিন্তু চরমভাবে ব্যর্থতা দেখিয়েছে ফুটবলাররা। তাই ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি আমি।’