কবির ক্রিকেট দর্শন
নিউজিল্যান্ড বনাম বাংলাল্যান্ড = বাংলাওয়াশ
১৯৯২ সালে পঞ্চম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। ২২ বছর পর এবার সেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেই দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসেছে। এটি হচ্ছে ক্রিকেটের ১১দশ আইসিসি বিশ্বকাপ।
সেবার কী ঘটেছিল, নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটভক্তদের তা জানা থাকা দরকার। জানি, অনেকেই তা জানেন, আবার অনেকেই জানেন না। ইন্টারনেটে সবই আছে বটে, কিন্তু সেও তো এক রকমের বইয়ের পাতায় ঘুমিয়ে থাকা বিদ্যার মতোই। অধ্যয়ন ছাড়া কোনো বিদ্যাই মানুষের বশে আসে না।
সেবার সূচনাপর্বের একটি ম্যাচেও হারেনি নিউজিল্যান্ড, এবারের বিশ্বকাপেও যেমন। কিউইদের অধিনায়ক মারকুটে ওপেনার মার্টিন ক্রোর (সেবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান ৪৫৬ এবং ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট) নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড যেন হারতেই ভুলে গিয়েছিল।
মার্টিন ক্রো সেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দুটো নতুন ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। ১. স্পিনার দীপক প্যাটেলকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছিলেন। কোনো স্পিনারকে দিয়ে নতুন বলে বোলিং করানোর চিন্তাও করেননি কেউ তাঁর আগে। ২. লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যান মার্ক গ্রেটব্যাচকে ওপরে তুলে এনে তাঁকে দিয়ে পিঞ্চ হিটিং করিয়েছিলেন। পিঞ্চ হিটিং মানে উইকেট হারানোর সকল প্রকার ভীতি মন থেকে মুছে ফেলে সর্বশক্তি দিয়ে নির্দোষ-অসহায় ক্রিকেট বলটাকে মারো বুম-বুম। কোনো মায়াদয়া নেই। ৪ ও ৬ তো করবেই, পারলে বলকে স্টেডিয়ামের বাইরে পাঠাও।
পরবর্তীকালে এই পিঞ্চ হিটিং পদ্ধতি প্রায় সব দলই অনুসরণ করে। শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়সুরিয়া ও পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি পিঞ্চ হিটিংয়ে প্রভূত সাফল্য লাভ করেন।
সেবার একনাগাড়ে সব ম্যাচই জিতে নেয় কিউইরা। সবাই ভাবতে থাকে, কিউইরাই এবার বিশ্বকাপ জিতে নেবে। তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবে।
আর ঠিক তখনই তীরে এসে তরী ডোবে নিউজিল্যান্ডের। সেমিতে পাকিস্তানের কাছে হেরে বিদায় নেয় অপরাজিত নিউজিল্যান্ড। সদ্য খেলতে নামা ইনজামাম-উল হক ৩৭ বলে ৬০ রানের একটি অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে নিয়ে যান। তাই ফাইনাল খেলতে নিউজিল্যান্ডকে আর কষ্ট করে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হয়নি।
ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি তখনো আসেনি। দ্বিতীয় সেমিতে তার খেসারত দিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই খেলায় জিততে হলে তখনকার প্রচলিত মোস্ট প্রোডাকটিভ ওভার সিস্টেমে দক্ষিণ আফ্রিকার টার্গেট দাঁড়ায় ১ বলে ২১ রান। এই অসম্ভব সমীকরণই পরে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি আবিষ্কারে সহায়ক হয়। এই পদ্ধতি ১৯৯২ সালে চালু থাকলে ইংল্যান্ড নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলত দক্ষিণ আফ্রিকা। আর কে জানে, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা হয়তো জিতে নিতেও পারত কাপটি।
২
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়ার সুখস্মৃতি নিয়েই এবারের বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল ইংল্যান্ড। ওয়ার্মআপটা শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পরাজয় ও ভারতের সঙ্গে জয়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু মূল পর্বের খেলায় এসে একমাত্র স্কটল্যান্ড ছাড়া জিততে পারেনি কোনো ম্যাচ। তিন হার ও এক জয় নিয়ে তার পিঠ যখন দেয়ালে, তখন ইংল্যান্ডের আশার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে কখনো খেলতে না পারা বাংলাদেশ।
কাল হ্যামিল্টনে বিশ্বকাপ থেকে ইংল্যান্ডকে গুডবাই জানানো সেই উজ্জীবিত বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অপরাজিত নিউজিল্যান্ড। কালকে কিউইদের বিজয়রথ কি থামাতে পারবে বাংলাদেশ?
১৯৯২ সালের মতো নয়, নিউজিল্যান্ডের বেলায় এবারের সমীকরণটা ভিন্ন (‘সমীকরণ’ শব্দটি ব্যবহার করতে গিয়ে সাংবাদিক ফারজানা রুপার কথা মনে পড়ছে)। কালকের খেলায় বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হলেও নিউজিল্যান্ডের অবস্থানের কোনোই পরিবর্তন ঘটবে না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে ডিঙিয়ে বাংলাদেশ উঠে আসতে পারবে পুল-‘এ’র দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে। তাতে বিপরীত পুলের অপেক্ষাকৃত কম ভালো করা দলটিকে সে পাবে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ হিসেবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে গিয়ে বাংলাওয়াশের দুঃসহ স্মৃতি নিউজিল্যান্ডকে তাড়িত করবে বৈকি!
কামরাঙ্গীরচর
১১টা ১৫মি.
১২ মার্চ ২০১৫