বিতর্কিত রানআউটে উত্তাল যুব বিশ্বকাপ
বল হাতে ছুটে আসছেন বোলার। নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান বেশ এগিয়ে গেছেন উত্তেজনার বশে। বোলারের সামনে রানআউটের সুবর্ণ সুযোগ। যদিও এমন সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ ক্রিকেট-চেতনার পরিপন্থী। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে এমন একটা রানআউট নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ‘সি’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে। জিতলেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত। ক্যারিবীয়দের ছুড়ে দেওয়া ২২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুইয়ানদের সামনে তখন জয়ের হাতছানি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য চাই তিন রান। উইকেট অবশ্য আছে একটিই। শেষ ওভার করার জন্য দৌড় শুরু করেন পেসার কিমো পল। তবে ডেলিভারির ঠিক আগে তিনি লক্ষ করেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা রিচার্ড এনগ্রাভা কিছুটা এগিয়ে গেছেন। পল আর বল করেননি, বেল ভেঙে দিয়েছেন।
পুরো মাঠ তখন হতবাক। এমন অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ, তা-ও আবার ক্রিকেট- স্পিরিট মেনে চলার জন্য যাদের অনেক সুনাম সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন খেলোয়াড়ের। তবে আচরণ যেমনই হোক, নিয়ম তো মানতেই হবে। মাঠের দুই আম্পায়ার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ক্যারিবীয় দলকে জিজ্ঞেস করেন তারা আউটের আবেদন প্রত্যাহার করতে চায় কি না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবেদন প্রত্যাহারে অস্বীকার জানালে আম্পায়াররা দ্বারস্থ হন টিভি আম্পায়ারের। আর তারপরই জানা যায় ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী এনগ্রাভা আউট।
দুই রানের নাটকীয় জয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে ক্যারিবীয়রা তখন উল্লাসে মাতোয়ারা। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ে দলের একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। এভাবে বিতর্কিত রানআউটের ফাঁদে পড়ে কোয়ার্টার ফাইনাল হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শোকে তাদের তরুণ ক্রিকেটাররা স্তব্ধ। অধিনায়ক ব্রেন্ডন মাভুতার তো খেলাশেষে কথা বলতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল, ‘আমরা অনেক কাছাকাছি গিয়েছিলাম। আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এই মুহূর্তে আমার আর কিছু বলার নেই।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার অবশ্য এর মধ্যে ‘অনৈতিক’ কিছু দেখছেন না, ‘ক্রিকেট হলো অনিশ্চয়তার খেলা। এমন ঘটনা আমরা আগেও ক্রিকেটে দেখেছি। এটা আমাদের জন্য কোনো বড় ব্যাপার নয়।’ এ ধরনের রানআউটের আবেদন ক্রিকেট-চেতনাবিরোধী কি না এমন প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘সম্ভবত নয়।’
এভাবে রানআউটের একটা নাম আছে ক্রিকেট—মানকড় আউট। ১৯৪৭ সালে সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এভাবেই রানআউট করেছিলেন ভারতের ভিনু মানকড়। তারপর থেকেই এমন নাম।
হেটমায়ার যতই এই আউটের পক্ষে কথা বলুক, বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার তীব্র সমালোচনা করেছেন ক্যারিবীয়দের মানসিকতা নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন লেম্যান আর নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিং টুইটও করেছেন এ নিয়ে।
সাধারণ ক্রিকেটভক্তরাও এমন আউট দেখে মর্মাহত। ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে সাজেদ নামের এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘এ ধরনের ঘটনা ভীষণ হতাশাজনক। এটা ক্রিকেটের স্পিরিটের বিরুদ্ধে।’ প্রণীত নামের আরেক ব্যক্তিও হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারেননি, ‘জিম্বাবুয়ের জন্য খুব খারাপ লাগছে। জয় তাদেরই প্রাপ্য। আমার ধারণা ক্রিকেট স্পিরিটের মৃত্যু হয়েছে।’ অনন্ত কুমার তো প্রায় তিন দশক আগের এক উদাহরণ টেনে বিলাপ করেছেন ক্যারিবীয়দের জন্য, “১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে আমরা কোর্টনি ওয়ালশ নামে একজন ভদ্র দৈত্যকে পেয়েছিলাম। তিনি সেলিম জাফরকে ‘মানকড়’ করতে অস্বীকার করেছিলেন। অথচ তাঁর উত্তরসূরিরা ভদ্রতার প্রাথমিক পরীক্ষায় ব্যর্থ। আমরা হয়তো আর কোনো কোর্টনি ওয়ালশকে দেখতে পাব না।”
১৯৮৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান সেলিম জাফরকে দাগ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখেও রানআউট করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি-পেসার ওয়ালশ। ম্যাচটা নাটকীয়ভাবে এক উইকেটে জিতেছিল পাকিস্তান।