‘ইতিহাস’ গড়ে শেষ চারে দক্ষিণ আফ্রিকা
আবারও বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচ হেরে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। ছিল ‘চোকার্স’ অপবাদ ঘোচানোর চ্যালেঞ্জ। সব শঙ্কা উড়িয়ে, চ্যালেঞ্জ জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা আজ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করা জেপি ডুমিনির অফস্পিনে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ১৩৩ রানে গুঁড়িয়ে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে প্রোটিয়ারা জিতেছে অতি সহজে, ৯ উইকেটে। বিশ্বকাপে কোনো নকআউট ম্যাচে এটাই দক্ষিণ আফ্রিকানদের প্রথম জয়। ডি ভিলিয়ার্সের দল তাই একটা ইতিহাসই গড়ল বুধবার। ২৪ মার্চ অকল্যান্ডে প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের বিজয়ী দল।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভার থেকে শ্রীলঙ্কানদের বিপর্যয়ের সূচনা। ভার্নন ফিল্যান্ডারের জায়গায় সুযোগ পাওয়া আরেক পেসার কাইল অ্যাবট দিনের দশম বলেই কট বিহাইন্ড করেন কুশল পেরেরাকে (৩)। ডেল স্টেইনের করা পঞ্চম ওভারে তিলকারত্নে দিলশান (০) ক্যাচ দেন ডু প্লেসিকে।
চার রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা ও লাহিরু থিরিমান্নে। ২০তম ওভারে ৪১ রান করা থিরিমান্নেকে আউট করে ৬৫ রানের জুটি ভেঙে দেন ইমরান তাহির। চার ওভার পর শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনেও (৪) এই লেগস্পিনারের শিকার। স্কোর তখন ৮১/৪।
সাঙ্গাকারা ও অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ৩৩ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল শ্রীলঙ্কানদের। কিন্তু দলীয় ১১৪ রানে ম্যাথিউসের বিদায়ের পর ধস নামে। মাত্র দুই রানের ব্যবধানে চার উইকেটের পতনে ভীষণ বিপদে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
৩৩তম ওভারের শেষ বলে ম্যাথিউসকে (১৯) ডু প্লেসির ক্যাচ বানিয়ে ডুমিনির হ্যাটট্রিকের সূচনা। নিজের পরের ওভারের প্রথম দুই বলে নুয়ান কুলাসেকারা ও থারিন্ডু কৌশলকে ফিরিয়ে তিনি ভেসে যান দারুণ অর্জনের আনন্দে। এর আগে এই বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইংল্যান্ডের পেসার স্টিভেন ফিন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
অন্য প্রান্তে সতীর্থদের যাওয়া-আসার ‘মিছিল’ দেখে বিরক্ত হয়েই বোধহয় আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া সাঙ্গাকারা। অ্যাবটের করা ৩৬তম ওভারে দুটো চারসহ ১১ রানও তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু মরকেলকে পরের ওভারে কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন ডিপ থার্ড ম্যানে।
খেলা শুরু হওয়ার আগে একটা দুঃসংবাদ পায় শ্রীলঙ্কা। বাঁ হাতের আঙুলের চোট বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে রঙ্গনা হেরাথকে। এই বাঁহাতি স্পিনারের জায়গায় সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার থারিন্ডু কৌশলের বুধবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলো। তবে অভিষেক ম্যাচকে বোধ হয় মনে রাখতে চাইবেন না তিনি।
গ্রুপ পর্বে ছয় ম্যাচে মাত্র ৫৩ রান করেছিলেন কুইন্টন ডি কক। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে রান পেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি ওপেনার। দলীয় ৪০ রানে হাশিম আমলার (১৬) বিদায়ের পর ডি কক ও ডু প্লেসির অবিচ্ছিন্ন ৯৪ রানের জুটি ১৮ ওভারেই জয় এনে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৫৭ বলে ৭৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন ডি কক। ডু প্লেসির অবদান অপরাজিত ২১ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ৩৭.২ ওভারে ১৩৩ (কুশল ৩, দিলশান ০, সাঙ্গাকারা ৪৫, থিরিমান্নে ৪১, জয়াবর্ধনে ৪, ম্যাথিউস ১৯, থিসারা ০, কুলাসেকারা ১, থারিন্ডু ০, চামিরা ২*, মালিঙ্গা ৩; তাহির ৪/২৬, ডুমিনি ৩/২৯, স্টেইন ১/১৮, অ্যাবট ১/২৭, মরকেল ১/২৭)
দক্ষিণ আফ্রিকা : ১৮ ওভারে ১৩৪/১ (আমলা ১৬, ডি কক ৭৮*, ডু প্লেসি ২১*; মালিঙ্গা ১/৪৩)
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : ইমরান তাহির।