কবির ক্রিকেট দর্শন
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হবে কার?
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় আমি খুশি হয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম, শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে একটি পয়েন্ট মুফতে পাওয়া গেল। এটা শুভ লক্ষণ। বাংলাদেশের প্রতি প্রসন্ন প্রকৃতির দান।
এখন ৭ পয়েন্ট নিয়ে স্বস্তিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর মনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের খেলাটা হলেই ভালো হতো। ব্রিজবেনের বৈরী আবহাওয়ার কারণে খেলা না হওয়ায় বাংলাদেশ যে একটি পয়েন্ট পেয়েছিল, ওটা আমাদের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখেনি। খেলাটি অনুষ্ঠিত হলে বরং আমাদের ছেলেদের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং প্র্যাকটিসটা ভালো হতো। বিশ্বকাপের মেধাতালিকায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অবস্থানটাও আরো মজবুত হতো।
সবাই যখন ছয়টি খেলা খেলেছে, আমরা ও অসিরা তখন খেলেছি পাঁচ ম্যাচ।
একাদশ বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার মাঠগুলোতে ভারত অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বেশ কটি টেস্ট ও বেশ কটি ওডিআই ম্যাচ খেলেছে। পরে ট্রাই সিরিজ খেলতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় ইংল্যান্ড। আর কোনো দলই অস্ট্রেলিয়ার মাঠে খেলার সে রকম সুযোগ পায়নি। শ্রীলঙ্কা পেয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। পাকিস্তানও পেয়েছিল বলে মনে পড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশ একেবারেই পায়নি।
এই জায়গাটায় আইসিসির নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করি। যে মাঠগুলোতে বিশ্বকাপ হবে, সেই মাঠগুলোকে আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য অন্তত ছয় মাস আগে থেকেই বিশেষ বিধিবলে সংরক্ষণ করা উচিত হবে, যাতে লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড হয় সবার জন্য।
এবারের বিশ্বকাপে ভারত যে আপাতত খুব ভালো ফল করেছে, পেছনে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে তাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার চার মাস আগে থেকেই তারা অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছে। ভারতের প্রতি আইসিসির এই পক্ষপাত এখন আর গোপন বিষয় নয়।
২
প্রথম রাউন্ডের খেলা শেষে কাল থেকে শুরু হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বের লড়াই। গতকাল সিডনির মাঠে এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকারত্নে দিলশান বা মহেলা জয়াবর্ধনের সমন্বয়ে গঠিত দলকে এভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে নাস্তানাবুদ হতে দেখে বিশ্বকাপের মজাটাই কমে গেছে কিছুটা। ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কা ভুল করেছিল বলেই আমি মনে করি। কুশলের উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কা আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। ১০০ ওভারের পরিবর্তে সর্বমোট ৩৭ + ২০ = ৫৭ ওভারের কোয়ার্টার ফাইনাল আমরা দেখতে চাইনি। বিশ্বকাপের বাকি খেলাগুলোতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা আর দেখতে চাই না।
আজ বৃষ্টির কারণে ভিন্ন কিছু না হলে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ভারতের। আমি প্রথম রাউন্ড শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্জনগুলোকে তুলনামূলকভাবে বিচার করে এই সিদ্ধান্তে এসেছি, যে দলই জিতুক, বেশ কষ্ট করেই জিততে হবে তাকে। কারো জন্যই সহজ জয় অপেক্ষা করে নেই আজকের জন্য।
বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম পাঁচজন ব্যাটসম্যান ও বোলারের পারফরম্যান্স পাশাপাশি রেখে তুলনা করে দেখতে পাচ্ছি, দু’দলের অর্জনই কাছাকাছি।
বাংলাদেশের পাঁচ ব্যাটসম্যান পেয়েছেন ১,০৮০ রান। পক্ষান্তরে, ভারতের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ হচ্ছে ১,১৭৫। ভারতের প্রথম পাঁচ বোলারের মোট উইকেট হচ্ছে ৪৮। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ বোলারের পাওয়া মোট উইকেট ৩০। একটা ম্যাচ কম না খেললে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের আরো অনুকূলে আসত।
সুতরাং আজকের খেলাটা যে কেহ কারে নাহি পারে সমানে সমানই হবে, সে কথা খুব যুক্তিযুক্তভাবেই বলা যায়। ‘কেহ কারে নাহি দেবে সূচ্যগ্র মেদিনী’।
২০০৭ সালে শচীন, দ্রাবিড়, সৌরভ ও শেবাগের ভারতকে যদি বাংলাদেশ হারাতে পারে, তবে ২০১৫-এর ভারতকে কেন নয়?
দেখা যাক, কবিগুরুর আশীর্বাদ এবার কোন দলের ওপরে বর্ষিত হয়।
জয় বাংলা। জয় কবিগুরু।
কামরাঙ্গীরচর
রাত ১টা ৩০ মিনিট
১৯ মার্চ-২০১৫