রিয়াল মাদ্রিদে ‘নতুন মেসি’
ফুটবলবিশ্বে যেন ধূমকেতুর মতো তাঁর আবির্ভাব। বয়স মাত্র ১৬, অথচ এখনই মার্টিন ওডেগার্ডকে নিয়ে আলোচনার ঝড়। খেলার ধরন অনেকটা লিওনেল মেসির মতো। আর্জেন্টাইন ফুটবল-জাদুকরের মতো ড্রিবল করে আর বল নিয়ন্ত্রণে রেখে আক্রমণে উঠতে ভালোবাসেন নরওয়ের এই ‘বিস্ময়বালক’। খেলেও মেসির মতো বাঁ পায়ে। এই ‘নতুন মেসি’র ঠিকানা কিন্তু বার্সেলোনা নয়, বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ।
গত ১৭ ডিসেম্বর জীবনের ষোড়শ জন্মদিন পালন করার আগেই কয়েকটি রেকর্ড ভেঙে দেন ওডেগার্ড। ২০১৪ সালের এপ্রিলে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে নরওয়ের প্রিমিয়ার বিভাগে খেলার কীর্তি গড়েন তিনি। তার এক মাস পর হয়ে যান নরওয়ে লিগের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। গত মৌসুমে স্ট্রমসগডসেটের হয়ে ২৩ ম্যাচ খেলে পাঁচ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে সাতটি গোল করিয়েছিলেন ওডেগার্ড।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে পা রেখেই হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছেন তিনি। গত আগস্টে সবচেয়ে কম বয়সে (১৫ বছর ২৫৩ দিন) নরওয়েকে প্রতিনিধিত্ব করার রেকর্ড গড়েছেন। দুই মাস পর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে খেলা সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলারও হয়ে গেছেন এই ‘বিস্ময়বালক’।
ওডেগার্ডের এসব কীর্তি ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজর এড়ায়নি। তাঁকে দলে টানতে মাঠে নেমে পড়ে আয়াক্স আমস্টার্ডাম, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা। শেষ পর্যন্ত সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে এই লড়াইয়ে বিজয়ী রিয়াল মাদ্রিদ।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আসতে পেরে ওডেগার্ডও উচ্ছ্বসিত। বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে কথোপকথনে খুশিটা লুকাতে পারেননি এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, ‘আমার মনে হয়েছে খেলাধুলা ও ব্যক্তিগত জীবনকে বিকশিত করতে এটাই (রিয়ালে যোগ দেওয়া) হতে পারে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। এটাই আমার জন্য সম্ভাব্য সেরা সিদ্ধান্ত।’
এখনই অবশ্য রিয়ালের মূল দলে দেখা যাবে না ওডেগার্ডকে। এবারের মৌসুমে তিনি খেলবেন রিয়ালের ‘বি’ দলে। তবে ফুটবল-জীবনকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এটাও তাঁর জন্য এক বিরাট সুযোগ। কারণ রিয়ালের ‘বি’ দলের কোচের দায়িত্বে আছেন জিনেদিন জিদান। ফ্রান্সের ফুটবল-কিংবদন্তির তত্ত্বাবধানে নিজেকে শাণিত করার প্রত্যয়েই প্রতিধ্বনিত হয়েছে ওডেগার্ডের কণ্ঠে, ‘আমার লক্ষ্য নিজেকে একজন ভালো ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলা। প্রথম দলে খেলছি না দ্বিতীয় দলে, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। সময় হলে নিশ্চয়ই সেরা দলে খেলব।’
বার্নাব্যুতে পা রেখে এমন এক ‘সার্টিফিকেট’ পেয়েছেন, যা যে কোনো তরুণ ফুটবলারের জীবনের পরম আরাধ্য হতে পারে। ওডেগার্ড সম্পর্কে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মূল্যায়ন, ‘সে ভালো খেলোয়াড়, বয়সে তরুণ এবং একটু-একটু করে নিজেকে গড়ে তুলছে। তার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আমাদের অবশ্যই তাকে গড়ে ওঠার মতো সময় দিতে হবে। আমি তার মধ্যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। তার বাঁ পায়ের কাজও দুর্দান্ত।’
বায়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট, জার্মানির আশির দশকের তারকা ফুটবলার কার্ল-হাইঞ্জ রুমেনিগে তো ওডেগার্ডকে ‘শতাব্দীর সেরা প্রতিভা’ বলতেও দ্বিধা করছেন না।
২০০৪ সালে স্পেনের লা লিগায় অভিষেকের সময় মেসির বয়স ছিল ১৭ বছর ১১৪ দিন। সবচেয়ে কম বয়সে লা লিগায় খেলার রেকর্ড ছিল সেটি। তিন বছর পর বার্সেলোনায় মেসির সাবেক সতীর্থ বোয়ান কারকিচ ভেঙে দেন রেকর্ডটি, ১৭ বছর ১৯ দিন বয়সে মাঠে নেমে।
রেকর্ড বইয়ের এই পাতায় ওডেগার্ডের নাম উঠবে কিনা, তা আপাতত ভবিষ্যতের গর্ভে!